কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলুদিয়া পালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আবুল কাশেম এর বাড়িটি একেবারে নিরব। শনিবার (২ মার্চ) সকাল আট টায় বাড়ির সামনে বসা ছিলেন এই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা। বাড়ির উঠানে সারিবদ্ধ চেয়ার বসানো। গ্রামের মানুষের কিছু আনাগোনা রয়েছে। বাড়ির একটু দূরে পশ্চিম মরিচ্যা জামে মসজিদের কবরস্থানে ৩টি কবর তৈরি করা হচ্ছে । সেখানে শায়িত করা হবে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা, তার স্ত্রী ও সন্তানকে।যারা রাজধানীর বেলি রোডের গ্রীনক কোজি কটেজ ভবনে লাগা আগুনে মারা গেছেন ।
এরা হলেন কাস্টমস ইন্সপেক্টর এর শাহাজালাল উদ্দিন(৩৫),তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা হেলালী (২৪),এবং তাদের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিলা (৪) শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ তিনটি গ্রহণ করেছেন নিহত শাহজালাল উদ্দিনের ভাই শাহজাহান সাজু। শাহজালাল সাজু হলদিয়া পালন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, তিনি জানিয়েছেন, মরদেহবাহী গাড়ি নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে মরিচ্যা গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। সন্তান হারিয়ে অনেকটা নির্বাক মুক্তিযোদ্ধা বাবা। তিনি কথা বলতেও পারছেন না। নিহতের মামাতো ভাই স্কুল শিক্ষক জালাল উদ্দিন বলেন। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে শাহজালাল উদ্দিন তৃতীয়, তিনি ২০১৭ সালে কাস্টমসের চাকরিতে যোগদান করেন।বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার পানগাঁও কাস্টমস অফিসে কর্মরত তিনি, প্রতিদিন বাবার সঙ্গে ৩-৪ বার কথা বলেন ফোনে। বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য টাকা দেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার পর বাবার সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন শাহজালাল।
তিনি বলেন, শাহ জালাল উদ্দিন পিতা কে জানিয়েছিলেন টানা ৩ দিনের ছুটি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে খাগড়াছড়িতে ভ্রমণে যাচ্ছেন। ঢাকায় শ্যালিকার মেডিকেল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে শশুর শাশুড়ি এসেছেন। তাদের সঙ্গে দেখা করেই রাতেই যাত্রা দেবেন। এরপর থেকে আর কোন খোঁজ খবর পাননি বাবা, বাবা ধারণা করেছিলেন ছেলে বউ নাতনিকে নিয়ে খাগড়াছড়ি গেছেন। শাহজালাল উদ্দিনের ছোটভাই হাসেম বিন লিনকন তিনি বলেন। বেইলি রোডের অগ্নি কান্ডের ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর কক্সবাজার কাস্টমস অফিসে ভাইয়ের এক সহ কর্মী ফোন করে জানান। ফেসবুকে অজ্ঞাত পরিচয় যে কয়েকজনের মরদেহ দেখা যাচ্ছে সেখানে ভাবি ও মেয়ের ছবি দেখা যাচ্ছে । ভাইয়ের বিষয়টি জানেন না, তারপর থেকে পরিবারের পক্ষে যোগাযোগ করার পর শুক্কুরবার রাতে 9:30 টার দিকে ভাবীর বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোক্তার হোসেন হেলালী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মর্গে গিয়ে তিনজনের মর দেহ সনাক্ত করেন।
এরপর প্রশাসনিকভাবে মরদেহ হস্তানান্তর করতে আইনুন বিষয় থাকায় রাতে ভাই সাজু ঢাকা পৌঁছে মরদেহ গ্রহণ করেন এবং গাড়ি যুগে রাওয়া হয়েছেন।
একমাত্র বোন তসলিমা আক্তার বলেন, ভাইদের মধ্যে অনেকটা বাবার ভূমিকা পালন করতেন, প্রতিনিয়ত ফোন করে খোঁজখবর নিতেন শাহজালাল, বৃহস্পতিবার রাতেও ফোন করেন কিছু লাগবে কিনা জানতে চেয়েছিলেন । এখন ভাই নেই, মামাতো ভাই স্কুল শিক্ষক জালাল উদ্দিন জানান , মরিচ্যা গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে কবর তৈরির কাজ চলছে, মরদেহ পৌঁছানোর পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।