খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় কিশোরী ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং বিশেষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা বিধানের দাবিতে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আজ সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫) সকালে ইউপিডিএফভুক্ত সংগঠনগুলো এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
যেসব স্থানে মানববন্ধন হয়েছে সেগুলো হলো খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াছড়ি সদর, মহালছড়ি, দীঘিনালা, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি এবং রাঙামাটি জেলার কাউখালী ও নান্যাচর।
খাগড়াছড়ি সদরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে সপ্তাহব্যাপী উপজেলা-জেলায় লাঠি ও ঝাড়ু মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা “ভাইবোনছড়ায় কিশোরীর ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই; ধর্ষকদের বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার কর; প্র:পা. চট্টগ্রামে ধর্ষণ বন্ধ হবে কবে? উ: সেনা-সেটলার প্রত্যাহার হলে; পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর; নারী নিরাপত্তার জন্য চাই স্বায়ত্তশাসন; সেটলার কলোনী = নারী ধর্ষণ; পার্বত্য চট্টগ্রাম + সেটলার = নারী ধর্ষণ; পার্বত্য চট্টগ্রাম – সেটলার = নারীর নিরাপত্তা; Justice for Bhaibonechara rape survivor; Stop HR violations in CHT; We Want Full Autonomy” ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মানববন্ধনে নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান বলেন, ‘এখানে পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনায় বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয় না। অপরাধীদের রক্ষায় রাষ্ট্রীয় একটি বিশেষ মহলের তৎপরতা থাকায় ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ ঘটে চলেছে এবং পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় কিশোরী ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা এবং অপরাধীরা চিহ্নিত ও কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ার পরও তাদেরকে রক্ষার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মরিয়া প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে নানা চক্রান্ত ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটলার বাঙালিদের নিয়ে আসার ফলে নারী ধর্ষণ, সাম্প্রদায়িক হামলা, ভূমি বেদখলের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ‘আগে পাহাড়িদের মধ্যে ধর্ষণ শব্দটি প্রচলিত ছিল না। কিন্তু সরকার পরিকল্পিতভাবে সমতল থেকে বাঙালি সেটলারদের বসতিস্থাপন করে দেয়ার পর থেকে তারা ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের সাথে পরিচিত হয়।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বতী সরকারের আমলে এসব ঘটনার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন এবং বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে কেবল মাত্র পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর নারীদের লক্ষ্য করে পরিচালিত যৌন হামলার প্রকৃত ও মূল কারণ সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে এবং তার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের নিরাপত্তাসহ পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্বের জন্য দরকার স্বায়ত্তশাসন। এ ব্যতীত পাহাড়ি নারীরা নিরাপদ থাকতে পারবে না। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
দাবি:
মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে ভাইবোনছড়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সকল ধর্ষককে গ্রেফতারপূর্বক বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার সাথে জড়িত চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত নারী ধর্ষণ-ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার বিচার, পাহাড়ি নারী ধর্ষণে মেডিকেল রিপোর্টের ওপর গোপন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন, সেনাশাসন প্রত্যাহারপূর্বক গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে পাহাড়ি নারীসহ জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন থেকে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিতসহ উল্লেখিত দাবিতে সপ্তাহব্যাপী পর্যায়ক্রমে উপজেলা-জেলায় লাঠি ও ঝাড়ু মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।