আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
মধ্য রাত ১২টা ১ মিনিটে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক, জয়পুরহাট পুলিশ সুপার,জয়পুরহাট বিচার বিভাগ, জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ, সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী শহীদ ডাক্তার আবুল কাশেম ময়দানে ফুল দিয়ে পুষ্প অর্পণ করেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
পৃথিবীর শুরু থেকে কত হাজারও ঘটনা নিয়ে যুদ্ধ ও জীবন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ভাষার জন্য জীবন দেয়ার ইতিহাস একমাত্র আমাদেরই। এজন্যই ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের গর্ব ও অহংকার। আজ জানবো অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া সেই গল্প। একুশে ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া সে গল্পের দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। প্রাণের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার এক অনন্য গল্প। বাঙালির ইতিহাসের এক হার না মানা গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের গল্প।
২১ শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস
২১ শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস: পটভূমি
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যায় ভারত আর পাকিস্তান। ভারতের সাথে দেশ ভাগের পর ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও শুধু মাত্র ধর্মীয় সংখ্যা গরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান দুটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। সংষ্কৃতি,ভাষা, শিক্ষা, আচার আচরণ ইত্যাদি বিষয়ে অমিল থাকার কারণে দুই প্রদেশের জনগণকে একই কাতারে কল্পনা করা যাচ্ছিলো না। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও সিভিল সার্ভিস, মিলিটারি ও গুরত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় পদে তাদের আধিপত্য বেশি ছিল। ক্রমে তারা নিজেদের শাসনকর্তা ও বাঙ্গালিদের প্রজা ভাবতে শুরু করলেন।
এতোকিছু করেও ক্ষ্যান্ত হননি তারা। নব গঠিত রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তারা উর্দূ ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করতে থাকে। এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে ঢাকায় “তমদ্দুন মজলিশের” সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে এক প্রতিবাদ সভা ও র্যালি বের করা হয়। সভায় বাংলাকে উর্দূর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা করার দাবী করা হয়। এবং এই অবস্থার প্রেক্ষিতে ১৯৪৭ এর ডিসেম্বর মাসে “রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ” গঠন করা হয়। এভাবে চলতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যকার শীতল যুদ্ধ।
পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন আত্নকেন্দ্রিক সিদ্ধান্তের কারনে আবারো সোচ্চার হয়ে উঠে বাঙ্গালী। ফলে ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবীতে পুনরায় মিছিল করা হয়। মিছিল করার অপরাধে গ্রেফতার হন শেখ মুজিবর রহমান, কাজী গোলাম মাহাবুব, অলি আহাদ, শওকত আলী, সামসুল হকসহ অনেকে।
.২১ শে ফেব্রুয়ারি – অমর একুশে ফেব্রুয়ারি
২১ শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস: মূল আন্দোলন
২১শে মার্চ, ১৯৪৮ সাল। ঢাকার রেসর্কোস ময়দান তৎকালীন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গভর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দৃঢ় ভাষায় ঘোষনা করেন “উর্দূ, এবং উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” এমন ঘোষণায় আবারো সোচ্চার হয়ে উঠে সমগ্র বাংলা। মায়ের মুখের ভাষা ছেড়ে অন্যভাষায় কথা বলার প্রশ্নই আসেনা। এভাবে অতিবাহিত হয় আরও ৪ বছর।
২৭শে জানুয়ারি, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের নব নিযুক্ত গর্ভণর জেনারেল খাজা নাজিম উদ্দিন ঢাকায় এসে পুনঃরায় ঘোষনা দেন, “উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” এই ঘোষনা শুনার পর আবার গর্জে উঠে বাঙ্গালী জাতি, প্রতিবাদে জ্বলে উঠে সারা বাংলা। ২১শে ফেব্রুয়ারী সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ র্কতৃক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে হরতালের ডাক দেওয়া হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সাল। সকাল হতে না হতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হতে লাগলো ছাত্র জনতা। পাকিস্তান সরকার ঐ দিন ঢাকায় ১৪৪ ধারা ঘোষনা করেন।
একসময় সমবেত ছাত্র জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং গাজীউল হকের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সবাই মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মিছিল যখন ঢাকা মেডিক্যালের কাছাকাছি আসে তখন শুরু হয় পুলিশের এলোপাতাড়ি গোলাগুলি।
গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত। বুলেটের আঘাতে রফিকের মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে জব্বার ও বরকত ঐ দিন রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়নে। আহত অবস্থায় ২৫শে ফেব্রুয়ারী রাতে মারা যান সালাম। এই ২১শে ফেব্রুয়ারী বর্তমানে প্রতি বছর আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পৃথিবীর সব দেশে একযোগে পালিত হয়। ১৭ই নভেম্বর, ১৯৯৯ সালে ইউনোস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারীকে ‘আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা’ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্ব এই দিবসটিকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু করেন।