পটুয়াখালীর বাউফলে এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সংখ্যালঘু পরিবারের অর্পিত সম্পত্তি লিজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি লিজ দেওয়ায় এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ ভায়েলেশন মামলা করা হয়েছে। পটুয়াখালী সহকারী জজ আদালতে এ মামলা করেন ভুক্তভোগী পুতুল চন্দ্র।
এদিকে, লিজ নেওয়া সম্পত্তি দখলে নিতে সংখ্যালঘু পরিবারকে দেশ ছাড়ার হুমকি দিয়ে খড়ের গাদায় আগুন, পানের বড়জ ভাঙচুর, জমির ফসল লুটপাট ও বিভিন্ন সবজি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের বহির দাশপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
আদালতে মামলা ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাহির দাশপাড়া মৌজায় ৪৭৬ নং খতিয়ানের একাধিক দাগে “ক” তফশীলভূক্ত ১ একর ৩৪ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি ফিরে পেতে জমির ওয়ারিশ পুতুল চন্দ্র ঘরামী ২০১২ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনাল পটুয়াখালী ১ আদালতে মামলা করেন। ২০১৪ সালের ৭ জুলাই আদালত আবেদনকারীর পক্ষে রায় প্রদান করেন। এরপর ওই জমি লিজ নিতে পুতুল ঘরামীর প্রতিবেশী আলতাফ গাজী ও হালিম গাজী উপজেলা সহকারী কমিশনারে কাছে আবেদন করেন।
এই তথ্য জেনে পুতুল ঘরামী ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি জমি লিজ না দিতে আদালতের স্বরনাপন্ন হন। আদালত ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ওই জমির উপর স্থিতিবস্থা জারি করেন। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক কুমার কুন্ডু আদালতের ওই স্থিতিবস্থা উপেক্ষা করে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই জমি আলতাফ গাজী ও হালিম গাজীর নামে ৭বছরের জন্য লিজ দেন।
লিজ নেওয়া জমি দখলে হামলা, ভাঙচুর আগুন ও ফসল লুটপাট ও সবজি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ করে ভুক্তিভোগী পরিবার বলেন, অবৈধভাবে লিজ নেয়া ওই সম্পত্তি দখলে নিতে এবং আমার বাড়ি ছাড়া করতে করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আলতাফ গাজী ও তার লোকজন। তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাদের কথা না শুনে ওই প্রভাবশালীদের পক্ষে নিয়ে আমাদের জমিতে লাল নিশান টানিয়ে দিয়েছে। দুইটি খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে জমির ফসল লুটতরাজ ও নানা ধরণের সবজির বাগান কেটে ফেলে। একই সাথে পানের বড়জ ভাঙচুর করে তচনছ করে দেয়। এতে আমরা আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন।
ভূক্তভোগী ও মামলার বাদি পুতুল চন্দ্র বলেন, ওই সম্পত্তি তাদের পূর্ব পুরুষের। দীর্ঘ বছর ধরে আমরা এই জমিতে বসবাস করে আসছি। ন্যায্য ওয়ারিশ হিসেবে আমরা ট্রাইব্রনালে মামলা করে রায় পেয়েছি। কিন্তু সংখ্যালঘু পরিবার হওয়ায় প্রভাবশালীরা আমাদের দেশ ছাড়া করার পায়তারা করছেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও জমি লিজ নিয়ে আমাদের হয়রানি করছেন।
এবিষয়ে জানতে আলতাফ গাজীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ছেলে নান্নু গাজী জানান, এগুলো সবই তাদের সাজানো নাটক। আমরা জমি লিজ নিয়েছি। সেই জমি ভোগ দখল করতে চাই।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যারা জমি লিজ নিয়েছেন, তারা জমি ভোগ করবেন। আর যদি কোনো আইনী জটিলতা থাকে সে বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দিবেন।
বাউফলের সহকারী কমিশনার(ভূমি) প্রতীক কুমার কুন্ডু বলেন, প্রতিবছর জমি লিজ দেওয়া ও নবায়ণ করা হয়। সেই হিসেব ওই জমিও লিজ দিয়েছি। তবে ওই জমি লিজ দিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কেউ আমাদের জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি দেখছি। আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।