1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সখীপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি সাময়িক অব্যাহতি, দায়িত্বে নাজিম মাস্টার লোহাগাড়ায় মারসা পরিবহনের ধাক্কায় শিক্ষক নিহত, স্থানীয়দের বিক্ষোভে প্রায় ৬ (ছয়)ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ শিবচরে প্রকাশ্যে হত্যা রাকিব মাদবরের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কালুখালীতে ৫০কোটি টাকার উন্নয়নের কাজ না করে ঠিকাদার নিরুদ্দেশ নারী-পুরুষের সমতা বিষয়ে সরিষাবাড়ীতে আলোচনা সভা মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে সশস্ত্র হামলার ঘটনায় জড়িত নয়ন-পিয়াস বাহিনীর অন্যতম সহযোগী গ্রেফতার মিঠাপুকুরে আমার জীবন আমার স্বপ্ন উদযাপন অনুষ্ঠান মুন্সীগঞ্জে ডিবি পুলিশ কর্তৃক মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতার ফুলবাড়ীতে পল্লি চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যু, মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকির অভিযোগ কালীগঞ্জে তৃতীয় লিঙ্গের পিংকি হসপিটালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে

শালিখা নামকরণের শালিক পাখি এখন বিলুপ্তির পথে

মুন্সী হাবিবুল্লাহ
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৭৭৬ বার পড়া হয়েছে

শালিখার নামকরণের পিছনে শালি ধানের গল্প থাকলেও কথিত রয়েছে এক সময় শালিখায় অগনিত শালিক পাখির আনাগোনা ছিল। শালিক পাখির বিচরণে শালিখার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছিল মূখরিত। শালিকের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গতো এখানকার মানুষের। সেই মনোমুগ্ধকর শালিক পাখি থেকেই মূলত শালিখার নামকরণ করা হয়েছে। মাগুরা জেলার অন্যতম একটি উপজেলার নাম শালিখা যা ছিল এক সময়কার অসংখ্য শালিক পাখির আবাস ভূমি। শালিক পাখি থেকে শালিখা উপজেলার নামকরণের গল্প থাকলেও গল্পের শালিক পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। মাঝারি আকারের বৃক্ষচর পাখি শালিক। গ্রাম-বাংলার অতি চেনা শালিক পাখিদের মধ্যে অন্যতম ‘কাঠ শালিক। শালিকের মাথা, পিঠ, লেজ ধূসর রূপালী রংয়ের। গলার নিচ থেকে বুক ও লেজের গোড়া পর্যন্ত হালকা খয়েরি রংয়ের। গলায় রয়েছে মালার মতো অতিরিক্ত ধূসর পালক। বসন্তের শুরু থেকে বর্ষা পর্যন্ত এদের প্রজনন ও ছানা লালন পালনের মৌসুম। এসময় মা পাখি ৩-৪ টি ছোট লম্বাটে হালকা নীল রঙের ডিম পাড়ে। এরা দলবদ্ধ ভাবে থাকা এই শালিক পাখি লাজুক স্বভাবের। মানুষের কাছাকাছি কম ঘেঁসে। এরা গাছের কোটরে গর্ত করে বাসা বানায়। শালিকের জীবনকাল ৫ থেকে ৭ বছর হয়ে থাকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নয় বছরও বাঁচে।অন্যসব পাখিদের মত শালিক‌পাখিও সর্বভূক। শহর, গ্রাম, প্রান্তর, ডাস্টবিন সর্বত্রই এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, শুঁয়োপোকা, কেঁচো, ফল, শস্যদানা, বীজ, ছোট সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী এবং মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার ও উ”িছষ্ট। সুযোগ পেলে এরা মরা ছোটখাটো প্রাণীও খায়। ২০ সেন্টিমিটার লম্বাটে এ পাখির গায়ে ছিটছিটে কালচে পালক রয়েছে। বছরের কোন কোন সময়ে এটি খানিকটা সাদা রঙের হয়। এদের ঠোঁটের রং গাঢ় কমলা-হলুদ, আর চোখের মনি হালকা হলুদ রঙের। ঝুঁটি শালিকও সাদা-কালো, তবে তার মাথায় একটা সুন্দর ঝুঁটি আছে। উজ্জ্বল বড় বড় চোখ ও পা লালচে বর্ণের হয়। চোখে ধূসর বৃত্তের মাঝখানে কালো ফোঁটা। ঠোঁটের গোড়ার অংশটি সুরমা ও আগার অংশ হলুদ বর্ণের। শালিক পাখি প্রজননের সময় অন্য পাখির বাসায় ডিম দেয়। পুরনো ও বড় গাছ এবং জঙ্গল কেটে ফেলায় তারা আশ্রয় হারা”েছ। শালিখার গ্রামের মাঠে-ঘাটে, ঝোঁপঝাড় ও বন বাদাড়ের গাছে-গাছে ঘুঘু, চড়ুই, ময়না, টিয়া, জাতীয় পাখি দোয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের বিবর্তনে এখন আর চিরচেনা শালিক পাখির দেখা মেলে না। ভোর বেলা পাখির কলরবে মুখরিত গ্রাম এখন প্রায় পাখি শূন্য। বন-জঙ্গলের অপরূপ দৃশ্যপট এখন বদলে গেছে। পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র, খাদ্য সঙ্কট, পাখির অভয়াশ্রম না থাকা ও জলবায়ুর পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে প্রায় বিলুপ্তির পথে শালিক পাখিসহ নানাবিধ দেশীয় প্রজাতির পাখি। এখন আর শোনা যায় না শালিক পাখির কিচিরমিচির শব্দে শিহরণ জাগানো সেই সুর।সরেজমিন শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী, গঙ্গারামপুর, বুনাগাতী, শতখালী , শালিখাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, শতখালী ও গঙ্গারামপুরের কিছু এলাকার ঝোপঝাড়ে কিছু পাখি আছে তবে তা আগের তুলনায় অপ্রতুল। শতখালী ইউনিয়নের বইরা গ্রামের ছান্টু মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় আগে শালিক, দোয়েল , ময়নাসহ অসংখ্য দেশি পাখি ভরপুর ছিল কিš‘ প্রতিকূল পরিবেশ ও খাদ্যসংকটের কারণে তা এখন অনেক কমে গেছে । গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের মাজেদুল ইসলাম বলেন, এখনতো বাগানের সংখ্যা কম তাই দেশি পাখির সংখ্যাও কমে গেছে ।জানা যায়, শালিক পাখি ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করার পাশাপাশি মলত্যাগ করে জমির উর্বতা বৃদ্ধি করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের ধলা কাজী, শুকুর বিশ্বাসহ গ্রামের কয়েকজন পাখিপ্রেমীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশের ঝাড়, আমের বাগান, বাড়ির ছাদে যেসব পাখি সব সময় দেখা যেত, ওই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক ঘুঘু, কাক, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি পাখি গ্রামে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও শালিক পাখি তেমন আর চোখে পড়ে না।দেশীয় পাখি কমে যাওয়ায় জুম জেনারেশনের লোকেরা পাখির গান ও কলকাকলি থেকে বঞ্চিত থাকায় তারা অনেক পাখিই চেনে না। দিন দিন শিকারিদের দৌরাত্ম্য ও বন বাগান কেটে বসতি ¯’াপন করায় পাখিশূন্য হয়ে যা”েছ পুরো এলাকা। এছাড়াও পাখির আবাস¯’ল ধ্বংস, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, বনাঞ্চল উজাড়সহ নানাবিধ কারণে শালিখা খ্যাত শালিক পাখিসহ অনেক পাখিই এখন বিলুপ্তির পথে।শ্রী ইন্দ্রনীল গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, পাখি শিকারসহ জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারনে দোয়েল পাখি বর্তমানে সচরাচর চোখে পড়ে না, বর্তমানে অনেকটা প্রায় বিলুপ্তের পর্যায়, পাখি শিকার ও ছোট খাল বিল নদী নালা ভরাট বন্ধ করা সহ সামাজিক ভাবে মানুষকে সচেতন করতে পারলে শালিক পাখি সহ সকল প্রকার দেশীয় পাখির প্রজনন বাড়বে। পাখি শিকার বন্ধ ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন ¯’ানীয় সচেতন মহল পাশাপাশি পক্ষীকূল সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com