এক সময় গ্রামীণ হাটে দেখা মিলতো ভ্রাম্যমাণ নাপিতের। মোড়া কিংবা কাঠের তক্তা দিয়ে বানানো পিঁড়িতে বসে চুল কাটাতেন মানুষ। পাশ ঘিরে চুল কাটানোর অপেক্ষায় থাকতেন আরও অনেকে। মেতে উঠতেন খোশগল্পে। তবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্য।এখন প্রতিটি হাটেই গড়ে উঠেছে সেলুনের স্থায়ী দোকান। ছোট-বড় যে ধরনের সেলুন হোক না কেনো আছে বিশাল আয়না, চেয়ার, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সাজগোজের প্রসাধনী।সৌন্দর্য বর্ধনে নরসুন্দরদের কদর ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একটা সময় হাট-বাজার, গ্রাম-গঞ্জে কাঠের পিঁড়ি বা খাটিয়ায় বসে নরসুন্দরেরা হাঁটুর নিচে মাথা পেতে মানুষ চুল, দাড়ি কাটতো। কালের বিবর্তনে ও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ও রুচির পরিবর্তনের ফলে পিঁিড়তে বসে চুল কাটা দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনও দুএকটি হাট-বাজারে পিঁড়িতে বসে নরসুন্দরেরা হাঁটুর নিচে মাথা পেতে মানুষের চুল, দাড়ি কাঁটছে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।যদিও যুগ যুগ ধরে চলে আসা গ্রামীণ এই ঐতিহ্য বিলুপ্তির প্রধান কারণ হলো আধুনিক সভ্যতার ছোয়া। সেই ছোয়ায় দৈনন্দিন জীবনে এসেছে পরিবর্তন, লেগেছে নতুনত্বের ছোয়া, গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক মানের সেলুন, জেন্টস পার্লার।আদমদীঘি ও আসপাশের হাট বাজারে এখনও চোখে পড়ে চিরচেনা সেই দৃশ্য। খরচের কথা মাথায় রেখে নিম্ন আযের মানুষ এখানে চুল-দাড়ি কাটেন।নরসুন্দর সুসিল চন্দ শীল বলেন , আদমদীঘিতে সপ্তাহে ২ দিন নশরতপুর ২ দিন মাঝে মধ্যে গ্রামে ও এই কাজ করি। ১৫-২০ বছর আগে চুল-দাড়ি কাটা ১০-২০ টাকা ছিল, সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে ভালো ভাবেই সংসার চলতো। কিন্তু বর্তমানে চুল কাটতে ২০-৩০ টাকা এবং দাড়ি কাটতে ১৫-২০ টাকা নেই। তবে এত কমদামে চুল দাড়ি কাটার পড়ও গ্রাহক পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। সারাদিনে ৪০০-৫০০ টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ প্রায় ২০/২৫ বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত আছি তাই ছাড়তেও পারছি না আবার ভালো ভাবে করতেও পারছি না।এ সকল নাপিতের কাছে চুল কাটাতে আসা মসলিম, আজাহার ও খালেক জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এখানে চুল কাটাই। যদিও বর্তমানে অনেক আধুনিক সেলুন আছে কিন্তু ওখানে চুল কাটা আমাদের সাধ ও সাধ্যের বাহিরে, তাই সাশ্রয়ী এই সব নাপিতের কাছেই চুল কাটতে আসি। সন্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নাজিম উদ্দিন জানান, কালের বিবর্তনে পিঁড়িতে বসে চুল কাটার দৃশ্য তেমন একটা চোখে পড়ে না, তবে একটা সময় ছিল বাবার হাত ধরে পিঁড়িতে বসে চুল কাটাতে যেতাম আদমদীঘি হাটে আবার কখনো সান্তাহারের হাটে। বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে সেলুন গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ মানুষ এখন সেইসব সেলুনেই চুল কাটাতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে।