আমতলী বর্ষার আগমনে আমতলীর খাল-বিল ও নদ-নদীগুলো যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আর এই বর্ষা মৌসুমেই আমতলীর ঐতিহ্যবাহী কাঠের নৌকার চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সেই সুযোগকে ঘিরে কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী ‘নৌকা গ্রাম’ এখন যেন এক কর্মচঞ্চল শিল্পাঞ্চল।
চুনাখালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের পাশেই অস্থায়ীভাবে পলিথিন টানিয়ে চলছে নৌকা তৈরির কাজ। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষই কোনো না কোনোভাবে যুক্ত নৌকা তৈরিতে। কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ পেরেক ঠুকছেন, কেউবা কাঠ ঘষে সমান করছেন। পাখির ডাকে ঘুম ভেঙেই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন কাজে, চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
বংশপরম্পরায় শত বছরের নৌকা তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন এই গ্রামের কারিগররা। দক্ষ হাতে কাঠ কেটে, রং করে, জোড়া লাগিয়ে তৈরি করছেন নানা আকারের নৌকা। পাশে সারি সারি সাজানো নৌকা যেন এক শিল্পের প্রদর্শনী।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম (২৫) বলেন,
বর্ষা আসলেই অর্ডারের চাপ বাড়ে। কৃষক, জেলে, এমনকি যাত্রী পরিবহনের জন্যও নৌকা লাগে। বছরে এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি রোজগার হয়।
তিনি জানান, চুনাখালী গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবার নৌকা তৈরির সঙ্গে জড়িত। ৫ জন কারিগরের একটি দল সপ্তাহে ৪–৫টি নৌকা তৈরি করতে পারে। প্রতিটি ১০–১২ হাত নৌকার খরচ পড়ে ৩–৪ হাজার টাকা, যা বিক্রি হয় প্রায় ৫ হাজার টাকায়। প্রতি মঙ্গলবার কলাপাড়া, মহিপুরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয় এসব নৌকা। বরগুনার বেতাগী, পাথরঘাটা, বামনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে এখানকার নৌকা কিনে নিয়ে যায় পাইকাররা। মাসে খরচ বাদে ৩০–৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন অনেকে।
কারিগর নূর জালাল, মবিন ও রিয়াজুল বলেন,
নৌকার দাম নির্ভর করে আকার ও কাঠের মানের ওপর। আমরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করি। ৮–৯ হাত নৌকার মজুরি পাই ৯০০ টাকা, আর ১০–১২ হাতের জন্য ১১০০ টাকা।
চুনাখালী গ্রামের ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন,
গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার এই পেশায় জড়িত। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের জন্য সরাসরি কোনো বরাদ্দ নেই, তবে প্রয়োজনে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করি।
২নং কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমেদ মাসুম তালুকদার বলেন,
নৌকা কারিগরদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। তবে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।