“যদি নেন পর্চা, দিতে হবে খরচা” এছাড়া কোন কাজের জন্য গেলে “চুক্তি করুন,অগ্রিম জমা দিন, বাকি টাকা কখন দিবেন? একথার নড়চড় হলে ফাইলে হাত দিব না”—এ যেন বালিপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অলিখিত নিয়ম! আর এই নিয়মের নিয়ন্ত্রক হিসেবে স্থানীয়রা যাকে চেনেন,তহসিলদার যার মাধ্যমে এসব কাজ করান তিনি হলেন বালিপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস (তহসিল অফিস) এর অফিস সহায়ক (পিয়ন) রুস্তম আলী ফরাজী। দেখতে ওনাকে হাজী সাহেব মনে হলেও ঘুষ ছাড়া উনি কিছুই বোঝেন না। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ,সেবা প্রত্যাশীদের হয়রানি এবং চুক্তিকৃত অর্থের বাইরে আরো অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের একের পর এক অভিযোগ উঠেছে।
সেবা নিতে আসা একাধিক ভুক্তভোগী জানান, নির্ধারিত সরকারি ফি’র বাইরেও রুস্তম আলীকে খুশি করতে হয়,না দিলে কোনো কাজই করেন না। সরাসরি হাতে টাকা নেওয়ার ঘটনাও রয়েছে একাধিক। নিজ অফিস কক্ষে বসে রুস্তম আলীর ঘুষ দেনদেনের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। যদিও রুস্তম আলী অর্থ লেনদেনের বিষয়টিকে ঘুষ বলতে নারাজ। এই অর্থ লেনদেনের বিষয়টিকে সরকারি খাজনা আদায়ের ভিডিও বলে দাবি করেছেন।
বালিপাড়া ওয়ার্ডের বাসিন্দা চাঁন মিয়া খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একটা নামজারি করতে গেলে রুস্তম আলী ১১ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে অনেক অনুরোধে ৭ হাজার টাকায় তার সাথে চুক্তি হয়। নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত ফি যেখানে ১১৭০ টাকা,সেখানে আমাদের এত বেশি টাকা ঘুষ দিয়ে কেন কাজ করাতে হবে।”
স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ সচেতন মহল বলছেন, রুস্তম আলী নিজের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন। মুখে মুখে বহু অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের নীরবতা তার সাহসকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
অভিযোগের বিষয়ে রুস্তম আলী বলেন, “আমি কোনো ঘুষ নেইনি, যেটা নেওয়া হয়েছে সেটা খাজনার টাকা। ঘুষের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”খাজনার টাকা কেন এভাবে আপনি নিবেন জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারিনি।
এদিকে বালিপাড়া ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্য জানান, “রুস্তম আলী বহুদিন ধরেই অফিসে ঘুষ বাণিজ্য চালাচ্ছেন। তিনি খোলাখুলি ভাবেই টাকা দাবি করেন। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা না নিলে জনসাধারণের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।”
এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসান বিন মুহাম্মদ আলী জানান, “এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”