ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) নির্বাচনকে ঘিরে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সেই পুরনো রাজনৈতিক দালাল, সুবিধাভোগী চক্র, যারা একসময় আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়ায় থেকে ই-ক্যাবকে করেছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এবার তারা ‘ইউনাইটেড’ ও ‘টাইগার’ নামে নতুন মোড়কে, নতুন নাটকে ক্ষমতায় ফেরার ষড়যন্ত্রে নেমেছে, যাদের পেছনে আছে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দুর্নীতিপরায়ণ সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক তেলবাজদের সক্রিয় মদদ।স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও তাদের মদদপুষ্ট কয়েকজন। আরো সাথে আছে বিএনপি নাম ধারী কিছু লোক যারা সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় সুবিধাভোগী,যাদের বিজনেস পার্টনার আওয়ামীলিগের ছিল।বর্তমানে তারা সাবেক আওয়ামী মন্ত্রীদের অর্থ পাচারে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই চক্রের সদস্যরা কেউ ছিলেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ঘনিষ্ঠ, কেউ তথ্যমন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের মঞ্চসাথী, কেউ আবার ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির ছায়াতলে ই-ক্যাবে সদস্য হয়েছেন জাল কাগজে। এখন তারা ভুয়া সদস্য বানিয়ে ভোটার তালিকায় নিজেদের লোক বসিয়ে নির্বাচনী মাঠ দখলের কৌশলে নেমেছে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: লাখ টাকার বিনিময়ে সদস্য বানানো, ভোটের আগে মোটা অঙ্কে টাকা ছড়ানো, জাল দলিল দিয়ে প্যানেল ঘোষণা, সরকারের ঘনিষ্ঠতা দেখিয়ে বিদেশি পুরস্কার নেওয়া, গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎকারী ইভ্যালির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, নির্বাচনী বৈঠক চালানো ধানমন্ডির গোপন অফিসে, এবং “জুলাই অভ্যুত্থানের” বিরোধিতা করে বানোয়াট সভা করে সরকার পতনের আন্দোলনে বিভ্রান্তি তৈরি।
এই চক্রের সদস্য তালিকায় আছেন:
আবু সুফিয়ান নিলাভ – পলকের সাবেক ব্যাক্তিগত ফটোগ্রাফার, বর্তমানে প্রার্থী
তাসদিক হাবিব – সাবেক ই-ক্যাব ইয়ুথ প্রেসিডেন্ট,পলক ঘনিষ্ঠ, কোটি টাকার ‘সুখের খামার’ বিনিয়োগ প্রতারণার অভিযোগ
হোসনে আরা নূরী – আওয়ামীলিগের হয়ে সরকারি অনুদান ও ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড ভোগকারী
জাহিদুজ্জামান সাঈদ – ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শো সঞ্চালক, সরকারি কনসালট্যান্ট
নুর নবী হাসান –আওয়ামীলিগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাইদুর রহমানের হয়ে ইক্যাব, ব্যাসিস নির্বাচনের আওয়ামী স্বার্থ রক্ষাকারী
মোহাম্মদ নুরুজ্জামান- ড্যাফোডিল গ্রুপের সিইও হয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্ট নেয়ার জন্য ইক্যাব বেসিস বাক্কোর আওয়ামীপন্থীদের সাথে কাজ করেন।
খালিদ সাইফুল্লাহ – আওয়ামী পরিচয়ে, সাংবাদিক পরিচয়ে প্রজেক্ট ভাগানো
সৈয়দ উছওয়াত ইমাম – আওয়ামীলিগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য,জাতীয় নির্বাচনে সাইদুর রহমানের হয়ে নির্বাচনী ফান্ড নিয়ন্ত্রনকারী
সাহাব উদ্দিন শিপন –অর্থ আত্মসাদকারী ইকমার্স ইভ্যালির সাবেক পরিচালক, পলকের ছায়াসঙ্গী
সূত্র জানায়, তাদের নির্বাচন দখলের অপচেষ্টা সরকারি কর্মকর্তা, সাবেক মন্ত্রী এবং ব্যবসায়ী গডফাদারদের আশীর্বাদে পরিচালিত হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে “ফ্যাসিবাদবিরোধী ই-ক্যাব সদস্যরা” অভিযোগ করেছেন, এক দশকের দখলদারিত্বে ই-ক্যাব হয়েছে পারিবারিক ফার্ম, যেখানে সাধারণ উদ্যোক্তারা ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের অধিকার হারিয়েছেন।সুত্র আরো জানায় বর্তমান তফসিল বাতিল করে বানিজ্য সংগঠন বিধিমালা ২০২৫ আলোকে নতুন নিয়মে নির্বাচন চেয়ে ১৮ জন প্রার্থী বানিজ্য সচিব বরাবর চিঠি প্রদান করে তা সত্তেও এখন পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
তারা বলছেন, যদি ২৬ জুলাইয়ের নির্বাচনে এই ফ্যাসিবাদী চক্র আবার ক্ষমতায় ফেরে, তাহলে তা হবে গণতন্ত্রের প্রতি চরম ধৃষ্টতা এবং নতুন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তারা হুঁশিয়ার করেছেন—প্রয়োজনে নির্বাচন প্রতিহত, বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যেই প্রশাসকের অধীনে থাকা ই-ক্যাবে নির্বাচনী প্রস্তুতির নামে চলছে কোটি টাকার খেলা, ক্ষমতা ভাগাভাগি, আর পেছনের দরজায় ভোট বেচাকেনার হট্টগোল। যে সংগঠন একসময় দেশের উদীয়মান উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম ছিল, আজ তা পরিণত হচ্ছে রাজনৈতিক দালাল ও সুবিধাবাদীদের জোটে।
নতুন নেতৃত্ব চায় ফ্যাসিবাদমুক্ত, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ই-ক্যাব।
পুরনো মুখোশধারীদের প্রত্যাবর্তন মানে হবে:
দুর্নীতি ফিরে আসা,উদ্যোক্তাদের কণ্ঠরোধ, নতুন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা।
প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে না পারলে ই-কমার্স খাত হারাবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা, বিনিয়োগ হারাবে গতি, উদ্যোক্তারা হারাবে নিরাপত্তা।
সময়সীমা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে—এখনই সিদ্ধান্তের সময়