সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিএনপির রাজনীতিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রাজপথের পরীক্ষিত ও ত্যাগী হিসেবে পরিচিত ৭ জন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাদের পদ স্থগিত করার সিদ্ধান্তে স্থবির হয়ে পড়েছে উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম।
আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে সচেতন মহল বলছে— মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে ত্যাগী নেতাদের পদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মনোবল ভেঙে পড়বে, যার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে।
অভিযোগ করা হয়েছে, স্থগিত হওয়া এসব নেতা কোনো দুর্নীতি বা অপকর্মের সাথে জড়িত নন। বরং তারা দলের জন্য জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। অথচ অভিযোগের কোনো তদন্ত ছাড়াই, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই জেলা কমিটির সুপারিশে তাদের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলের ভেতরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা করাটাই অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি শুধুমাত্র নেতৃত্বের লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার কারণে জনপ্রিয় নেতাদের পদ স্থগিত বা বহিষ্কার করা হয়, তবে বিএনপির ভবিষ্যৎ সংকটের মুখে পড়বে।
তারা বলেন— বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না দেয় এবং নেতৃত্ব নির্বাচনে স্বচ্ছতা না আনে, তবে মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতারা হারিয়ে যাবেন। সুবিধাভোগী ও তোষামোদনির্ভর গোষ্ঠী সুযোগ নেবে।
উপজেলা বিএনপির স্থগিত হওয়া সাত নেতা হলেন—
হেলাল সরকার, বেলাল হোসেন, মকুল হোসেন, আশরাফুল ইসলাম মিন্টু, হায়দার আলী, মিজানুর রহমান বাবু ও ছাকোয়াত হোসেন সাবুর।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি, এরা সকলেই সাহসী, সৎ এবং গণতন্ত্রবাদী নেতা, যারা বরাবরই তৃণমূলে সক্রিয় ছিলেন।
উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, হেলাল সরকার বলেন, ১৭ বছর আওয়ামী লীগের হাতে নির্যাতিত হয়ে জেল,জুলুম অত্যাচার সহ্য করে রাজনীতি করেছি। পদ স্থগিতাদেশ দেওয়ার আগে আমাদের আত্মা পক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি। এবং আমাদেরকে কোনভাবে জানানো হয়নি। জেলা বিএনপির সন্মানিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে আমাদের সবিনয় আবেদন, দ্রুত আমাদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে স্বাভাবিক ভাবে রাজনীতি করার সুযোগ দিন। নইলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল আমাদের দলের সাংগঠনিক দূর্বলতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে।
পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র, বেলাল হোসেন বলেেন, অনেক নির্যাতন সহ্য করে রাজনীতি করতে হয়েছে, আর এখন আমাদের পদ স্থগিত করে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার হারিয়েছি। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মহোদয়ের কাছে নিবেদন, আমাদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রাজনৈতিক মর্যদা ফিরিয়ে দিন। যেন আমরা আবার স্বাভাবিক ভাবে রাজনীতি করতে পারি।
এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে, এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য ভয়ংকর এক নজির তৈরি করবে।
সিরাজগঞ্জের নেতাকর্মীরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক জনাব তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত এ সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।