জয়পুরহাট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে গত দুই দশকে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। এ নিয়ে সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক ও শোকের ছায়া নেমে থাকলেও আজও এসব হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। নিহতদের পরিবারগুলোর দাবি—বিনা উস্কানিতে, বিনা অপরাধে তাদের প্রিয়জনদের হত্যা করা হয়েছে। তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
একাধিক পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রিয়জন হারিয়ে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কেউ হয়েছেন পাগলপ্রায়, কেউবা সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সীমান্তে একতরফা এই হত্যাযজ্ঞ থামানো ও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসছেন ভুক্তভোগীরা।
হাটখোলা গ্রামের জনির বাবা আনোয়ার হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার ছেলে বেঁচে থাকলে কোরআনের হাফেজ হতো।”
জনির মা বিলকিস বেগম আক্ষেপ করে বলেন, “কোনো বিচার পাইনি, মামলা হয়নি!”
নুন্দইল গ্রামের নিহত শামীমের স্ত্রী পরিবানু বেগম বলেন, “আমি একটা সন্তানকে লালন-পালন করতে না পেরে অন্যকে দিয়ে দিয়েছি!”
একই গ্রামের নিহত জামিরুল মণ্ডলের বড় ভাই খাইরুল ইসলাম জানান, “আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলো। আমরা আজও বুঝে উঠতে পারিনি কেনো তাকে হত্যা করা হলো!”
একই গ্রামের উলফন বেগম, যিনি তার একমাত্র ছেলে রাজুকে হারিয়েছেন, কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমাকে বিচার করে দেন।”
হাটখোলার নিহত জনির চাচা আতোয়ারের অভিযোগ আরও ভয়াবহ। তার ভাষ্য, “বিএসএফ আমার ভাতিজার হাত-পা কেটে, চোখ উপড়ে লাশ পাঠিয়েছে!”
উচনা সোনাতলার নিহত মুনসুর আলীর মা বলেন, “আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে পাটের জাগের নিচে লুকিয়ে রেখেছে!” আর তার বাবা আব্দুল বাসেত বলেন, “আমরাই কেনো শুধু মরি? তারা তো মরে না!”
জাতীয় নাগরিক পার্টির জয়পুরহাট জেলার যুগ্ম আহবায়ক সংগঠক ওমর আলী বাবু বলেন, “জয়পুরহাট সীমান্তে বিএসএফ যেভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, তা মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। বিগত সরকার এ বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে এসব হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
জয়পুরহাট জর্জ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শাহানুর আলম শাহীন বলেন, “সীমান্ত হত্যা দু’দেশের সীমান্ত রক্ষীদের ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি না হলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।”
সীমান্তের এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা থামাতে হলে প্রয়োজন আন্তঃরাষ্ট্রীয় আন্তরিকতা, কার্যকরী কূটনীতি ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা। নয়তো সীমান্তের এ কান্না থামার নয়—বরং রক্তের হোলি খেলা চলতেই থাকবে।