1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ইটনায় বজ্রপাতে নিহত ১,আহত ৪ শাল্লায় চোরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ, গ্রেফতার, ৯জন দুলার হাটে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে একই পরিবারের আহত-৫ পানছড়িতে সন্ত্রাসীদের সিগনাল ওয়াকিটকি সহ একজন আটক উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ফলে বিপুল প্রাণহানির ঘটনায় ইউপিডিএফ-এর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন বগুড়া প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে বিএনপি নেতা শফিকের মত বিনিময় বিমান বিধস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে কুদুকছড়িতে পিপিপির প্রদীপ প্রজ্বলন নন্দীগ্রামে মুদি দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা বগুড়ায় আমীরে জামায়াতের যাত্রা বিরতি ঝিনাইদহ কালিগঞ্জ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে আড়পাড়া বাসীর অভিযোগ

এক সাথেই খেলতো তিন শিশু, এখন পাশাপাশি কবরে শুয়ে আছে

জনাব মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম বাপ্পী | দেশ বুলেটিন প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

প্রতিদিনের মতোই সোমবার সকালে একসাথে স্কুলে গিয়েছিল আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থীদের স্কুল শেষে চলছিল কোচিংয়ের ক্লাস। ক্লাস শেষে আবারো ঘরে ফেরার কথা ছিল। ঘরে ফিরেছে তারা কিন্তু এবারের ফেরাটা ভিন্ন।

হাশিখুশি মুখগুলো নিথর দেহ হয়ে পৌছেছে স্বজনদের কাছে।

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ঝরেছে এই তিন শিশুর প্রাণ। তারা একই বংশের সদস্য। দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদ এলাকায় এক সাথেই বেড়ে উঠছিল, তারা আবার মৃত্যুও একই ঘটনায়।

মঙ্গলবার ওই এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে মিললো শোকের আবহ। দুদিন আগেও যে আঙিনায় একসাথে খেলাধুলায় মেতে থাকতো এই শিশুরা সেখানেই আজ পাশাপাশি কবরে শায়িত।চোখের জলে পরিবারের কনিষ্ঠ তিন সদস্যকে বিদায় জানালো স্বজনেরা। পুরো এলাকায় যেন শোকস্তব্ধ। অঝোরে কেঁদেছেন বন্ধু, সহপাঠি আর প্রতিবেশিরাও।

বংশের তিন সন্তানকে হারিয়ে স্বজনদের আহাজারি
ছবির ক্যাপশান,পরিবারের তিন সন্তানকে হারিয়ে স্বজনদের আহাজারি

সরেজমিন যে দৃশ্য দেখা গেল

মাইলস্টোন স্কুল থেকে কিছুটা দূরেই দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদ। যেখানে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন দশ বছরের শিশু আরিয়ান এবং নয় বছরের বাপ্পি ও হুমায়ের। সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা হলেও কাছাকাছি বয়স হওয়ায় তারা ছিল বন্ধু, সহপাঠী, খেলার সাথী।

সোমবারের দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজনই। দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের।

তারারটেক মসজিদের পাশেই পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতো আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের। আলাদা তিনটি বাড়িতে থাকলেও তারা একই পরিবারের সদস্য, সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।

তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী বাপ্পি ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু শাহিনের সন্তান এবং একই ক্লাসের হুমায়ের তার ভাইয়ের ছেলে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া দশ বছরের আরিয়ান মি. শাহিনের চাচাতো ভাই।

সন্তানের কবরের পাশে দাড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন শোকার্ত এই মানুষটি। পাশের দাড়িয়ে তাকে সান্ত্বনা দেয়া চেষ্টা করছিলেন প্রতিবেশি আর স্বজনরা।

ঘটনার দিন সকালে প্রতিদিনের মতো একসাথেই স্কুলে গিয়েছিল এই তিনজন। সকাল ১১টায় স্কুল শেষে অংশ নিয়েছিল কোচিংয়ের ক্লাসে। বেলা দেড়টায় ক্লাস শেষ হওয়ার কথা ছিল।

ওই দিন জোহরের নামাজ শেষে বাপ্পিকে আনতে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন মি. শাহিন। এক সঙ্গেই ফেরার কথা ছিল তার ভাই আরিয়ান ও ভাতিজা হুমায়েরও।

তিন শিশুর জানাজায় অংশ নেন এলাকার অনেক মানুষ
ছবির ক্যাপশান,তিন শিশুর জানাজায় অংশ নেন এলাকার অনেক মানুষ

কিন্তু পথেই শুনতে পান বিকট আওয়াজ। কিছুটা এগোতেই ধোঁয়ার কুণ্ডুলী দেখে দৌড়ে পৌছান স্কুল প্রাঙ্গনে। “কিন্তু ততোক্ষণে সব শেষ,” বলছিলেন মি. শাহিন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “আমার ছেলে যে ক্লাসে পড়ে তার আগের ক্লাসটায় বিমানডা ঢুকছে। দেখে তহনি বুঝজি যে আমার ছেলে আর নাই।”

আহত হলেও দুর্ঘটনাস্থল থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল তার সন্তান বাপ্পি এবং ভাই আরিয়ান। তবে এর কিছুক্ষণ পরে মারা যায় হুমায়ের।

“গত রাত তিনটা বাজে হাসপাতালে আমার ভাইটা মারা গেছে। আমার ছেলে বাপ্পি মারা গেছে সবার পরে,” বলছিলেন মি. শাহিন।

নিহত তিন শিশুর জানাজায় অংশ নেন অনেক মানুষ। দূর থেকে এক নজর দেখতে এসেছিলেন স্বজন, প্রতিবেশি আর সহপাঠীরাও।

দুর্ঘটনার সময় ক্লাসে না থাকায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন আরিয়ানের সহপাঠি রাইয়ান আফনান। বন্ধুকে শেষ বিদায় জানাতে বাবার সঙ্গে জানাজায় অংশ নিয়েছিল সে।

বিবিসি বাংলাকে আফনান জানান, “ওই দিন আমিও স্কুলে ছিলাম। কিন্তু ওই সময় বাইরের লাইব্রেরিতে গেছিলাম। আমি যখন মেইন গেট পার হইছি তখনই বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম।”

মাইলস্টোন স্কুলের বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ওই এলাকায় আরো দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। যাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন পরিবারের সদস্যরা।

হঠাৎ এমন ভয়াবহ ঘটনায় হতবাক এলাকার বাসিন্দারা।

“মাত্র একদিন আগে যে শিশুদের একসাথে স্কুলে যেতে অথবা খেলে বেড়াতে দেখলাম, তারা আজ নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা মোতালেব হোসেন।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com