১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের পর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, বহু আত্মত্যাগ আর বীরত্বগাঁথা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অবশেষে ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা।
এই দিন কলারোয়ার আকাশে প্রথমবার উড্ডীন হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা, যা মুক্তিকামী মানুষের মাঝে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ ও বিজয়ের উল্লাস।
একাত্তরের সেই দিনটি:
মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়া ছিল ৮ নম্বর সেক্টরের অধীন। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন ও আব্দুল গফফারের নেতৃত্বে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একের পর এক সফল অপারেশন পরিচালনা করেন। তাঁদের এই অদম্য সাহসিকতা এবং ধারাবাহিক সফল আক্রমণের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী।
উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ:
এই অঞ্চলে সংঘটিত কয়েকটি বড় সম্মুখযুদ্ধের মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বরের বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ এবং ১৭ সেপ্টেম্বরের কাঁকডাঙ্গা যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধে ২৯ জন পাকসেনা নিহত হলেও শহীদ হন ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আত্মত্যাগ:
জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়ার ৩৪৩ জন বীর সন্তান অংশগ্রহণ করেন এবং এর মধ্যে ২৭ জন বীর যোদ্ধা শহীদ হন। তাঁদের আত্মত্যাগেই ত্বরান্বিত হয় কলারোয়ার মুক্তি।
হানাদার বাহিনীর পলায়ন:
চূড়ান্ত পরাজয় নিশ্চিত জেনে ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে পাকিস্তানি হানাদাররা বেত্রবতী নদীর লোহার ব্রিজ মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরদিন ৬ ডিসেম্বর ভোরে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা নদী পার হয়ে কলারোয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ নেন এবং থানা চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এভাবেই কলারোয়ার মাটি পাক হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয়।
স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি:
প্রতি বছর এই দিনটি কলারোয়ায় যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন।
একাত্তরের বেশে বিজয় শোভাযাত্রা।
মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা ও দোয়ানুষ্ঠান।
৬ ডিসেম্বর কলারোয়া মুক্ত দিবস শুধু একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের অস্তিত্ব, অর্জন ও আত্মত্যাগের এক জ্বলন্ত স্মরণগাথা। অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও ত্যাগের ফলেই অর্জিত হয়েছিল এই স্বাধীনতা। জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করে স্বাধীনতার সকল বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের।