সুন্দরবনের নীরব জলপথকে ফের অশান্ত করে তোলার আগেই দুর্ধর্ষ ডাকাত ‘ছোটন বাহিনী’র একটি মারাত্মক চক্রান্ত ভেস্তে দিয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌ বাহিনী। কঠোর নিরাপত্তামূলক যৌথ অভিযানে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে হাতে-নাতে ধরা পড়েছে এই কুখ্যাত বাহিনীর এক প্রধান সহযোগী।
সূত্রমতে, সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা জেলার কয়রা উপজেলাধীন রায়নদী এলাকার খাশিটানা খাল হয়ে বনদস্যুরা ডাকাতির ছক কষছে—এমন বিশেষ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নড়েচড়ে বসে নিরাপত্তা বাহিনী। তাৎক্ষণিকভাবে, গত ১৩ অক্টোবর সোমবার সকাল ৯টায় কোস্ট গার্ড স্টেশন কয়রা এবং নৌ বাহিনী কন্টিনজেন্ট কয়রা ওই দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ গতিতে একটি বিশেষ যৌথ অভিযান শুরু করে।
অভিযান পরিচালনাকারী দলের ধাওয়ায় পালানোর সুযোগ পায়নি ছোটন বাহিনীর দীর্ঘদিনের সহযোগী সাগর শেখ (নব মুসলিম) ওরফে জয় শীল (৪১)। অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুতসহ ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১টি শক্তিশালী একনলা বন্দুক, ২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ এবং ৩ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ।
কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আটক সাগর শেখ মূলত নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হলেও খুলনার কয়রা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে শশুরবাড়িতে বসবাস করতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছোটন বাহিনীর জন্য কেবল ডাকাতি নয়, বরং অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অত্যাবশ্যকীয় রসদ সরবরাহের মূল দায়িত্বে ছিলেন। এক কথায়, সে ছিল এই দস্যুদলের ‘সরঞ্জাম সরবরাহকারী’।
সাম্প্রতিককালে সুন্দরবন এলাকায় জেলে-বাওয়ালীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গিয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর এই দ্রুত ও সফল পদক্ষেপে জিম্মি দশা থেকে মুক্তির নতুন আশা দেখছেন সাধারণ বনজীবীরা।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক আরও বলেন, “জব্দকৃত মারাত্মক অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং আটককৃত দস্যু সহযোগীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সুন্দরবনকে সম্পূর্ণরূপে দস্যুমুক্ত রাখতে এবং বনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
বনদস্যুদের মূল সাপ্লাই চেইন ভেঙে দেওয়ার এই সাফল্য সুন্দরবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।