কুমিল্লার হোমনা উপজেলার সিতারামপুর গ্রামের তরুণী তাসলিমা আক্তার চান্দেরচর গ্রামের যুবক সালাহ উদ্দিনের বাড়ির সামনে গিয়ে বিয়ের দাবীতে অনশন করাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। তবে একটি মহলের তৎপরতায় বিষয়টি নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে।
এদিকে তাসলিমা আক্তার দাবি করেন, ২০২৩ সাল থেকে সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার গর্ভে সালাহ উদ্দিনের সন্তান ছিল পরবর্তীতে সেই সন্তান নষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিয়ে না করায় তিনি বাধ্য হয়ে সালাহ উদ্দিনের বাড়ির সামনে গিয়ে অনশন শুরু করেন।
এ বিষয় সালাহ উদ্দিন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই মেয়ের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। একটি মহলের পরামর্শে টাকা পয়সার লোভে পড়ে আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করছে। এটি তার ব্যবসা। এ দিকে এ ঘটনায় সালাহ উদ্দিনের পরিবার বিপাকে পড়েছে। একটি মহল সামাজিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। সামাজিক চাপ সামলাতে না পেরে ছেলের বাবা সামসুল হক স্ট্রোক করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, তাসলিমা আক্তার গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের মতো সহজ-সরল নন। সে সুন্দরী এবং স্মার্ট। তার বাড়ি বাকসিতারামপুর হলেও সে প্রায় সময় চট্রগ্রামে বসবাস করেন। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলেও সে বিলাসী জীবন যাপন করেন। তার উচ্চ মহলের লোকজনের সাথে পরিচয় ও জানাশোনা রয়েছে। শুনাযাচ্ছে তার পাসপোট আছে এবং একাধিক দেশ ভ্রমনও করেছেন।
এদিকে চট্টগ্রামে তার ব্যবসার কথা প্রচার করা হলেও আসলে তার বিলাসবহুল জীবনযাপনের অর্থের উৎস সম্পর্কে গ্রামের কেহ জানে না। কিন্ত সে দুটি দামি মোবাইল সেট ব্যবহার করেন একটি আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স ও আইফোন ১৫ প্রোমেক্স। তার বিলাসী পোশাক-আশাক ও শহরমুখী জীবনযাপন নিয়ে গ্রামে শুরু হয়েছে নানা কানাঘুষা ।
এ বিষয় সম্পর্কে গ্রামবাসির নিকট জানতে চাইল নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান- ২০২৩ সালেই যদি সম্পর্ক হয়ে থাকে, তাহলে এতদিন তাসলিমা কেন কোনো অভিযোগ করেননি? অথবা আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। তার বিয়ের বয়স পার হতে চললেও তার পরিবারের কেহ কাউকে কিছু জানায়নি।
তাসলিমা আক্তার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তিনি কীভাবে এত ব্যয়বহুল জীবনযাপন করছেন?চট্টগ্রামে তার প্রকৃত কাজ বা ব্যবসা কী? গ্রামের কেহ জানে না। এখন অনশনের পরে এসব প্রশ্নে ঘটনাটি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
এছাড়া সমাজে বিয়ের দাবীতে অনশন অনেক পুরনো একটি কৌশল। অনেক সময় প্রকৃত সম্পর্ক থেকে মেয়েরা বঞ্চিত হয়, আবার কখনো সামাজিক বা আর্থিক স্বার্থে ছেলে পক্ষকে চাপে ফেলতে এমন নাটক মঞ্চস্থ হয়।-এ ধরনের ঘটনায় কেবল দুই পরিবার নয়, পুরো সমাজ অস্থির হয়ে পড়ে ও সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠে।
তবে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিয়ের দাবীতে অনশন কোনো আইনি বৈধতা পায় না। যদি সত্যিই সম্পর্ক থাকে, সামাজিক সমঝোতা নয় তো প্রমাণ সাপেক্ষে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া সামাজিক চাপ সৃষ্টি করা উভয় পক্ষের জন্য ক্ষতিকর ও আইনের পরিপন্থী।
তাসলিমা আক্তার ও সালাহ উদ্দিনকে ঘিরে যে ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে তা শুধু দুটি পরিবার নয়, পুরো সমাজকে আলোড়িত করেছে।
একটি মহলের তৎপরতা, উপযুক্ত প্রমাণ, তরুণীর বিলাসী জীবনযাপন ও “উচ্চ মহলে” তার যোগাযোগ,তার অর্থের উৎসের সন্ধান করতে পারলেই আসল রহস্য উদঘাটিত হবে।