লাখাই উপজেলার ৫নং করাব ইউনিয়নের আগাপুর গ্রামে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশুকে দিয়ে তন্ত্র-মন্ত্র ও কবিরাজি চিকিৎসার নামে চলছে রমরমা প্রতারণা। এই অবুঝ শিশুকে ব্যবহার করে তার বাবা গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগাপুর গ্রামের শৈলেন সরকার, যিনি একসময় জেলে হিসেবে কাজ করতেন, প্রায় এক বছর আগে তার ছেলে শ্রীদাম সরকারকে (১০) দিয়ে কবিরাজি ব্যবসা শুরু করেন। এই শিশু কবিরাজের নাম ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ তার কাছে ভিড় জমাচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে শৈলেন সরকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের সরু রাস্তায় রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির উঠানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে, যাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।
রোগীরা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শ্রীদাম সরকারকে ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করছেন। পানি ও তেলপড়া এবং ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে তিনি চিকিৎসা দিচ্ছেন। বাবার নির্দেশে শ্রীদাম বোতল ভর্তি পানি ও তেলের শিশিতে ফুঁক দিচ্ছেন এবং প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ৩৭০/৫২০ টাকা করে ‘হাদিয়া’ নেওয়া হচ্ছে। গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের টাকা এবং ছাগল মানত করতে বলা হচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা ১৫-২০ জন রোগী জানান, তারা লোকমুখে রোগ ভালো হওয়ার কথা শুনে এসেছেন, তবে বেশিরভাগই কোনো উপকার পাননি। একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগী বলেন, “দুই দিন ধরে আসছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।”
তবে শ্রীদামের মা দাবি করেন, তার ছেলের ঝাড়ফুঁকে অনেক জটিল রোগেরও উন্নতি হয়েছে।
সচেতন মহলের মতে, এই কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ কুসংস্কার। তারা মনে করেন, শৈলেন সরকার তার চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া ছেলেকে দিয়ে অন্যায় করছেন। এই চিকিৎসার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এ ব্যাপারে শিশু শ্রীদাম জানায়, সে আগাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। সে স্কুলে যেতে চাইলেও তার বাবা তাকে বারণ করেন, কারণ রোগী আসবে। সাংবাদিকরা শৈলেন সরকারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই বিষয়ে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপম দাস অনুপ-এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।