কুড়িগ্রামের উলিপুরের ধামশ্রেণী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ দরিচর গ্রামে পুত্রবধূ সেফার বর্বরোচিত আঘাতে আহত ৬০ বছরের বৃদ্ধ আকতার আলী। আহত আকতার আলী বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার পু্ত্র সবুজ ও আমার পুত্রবধু শেফা ঢাকায় থাকে। সবুজ যেন আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ না রাখে, আমাদের ভরনপোষণ না করে সেই জন্য পুত্রবধূ শেফা সবুজের উপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই দন্দ লেগে থাকতো। ( ০৫/০৩/২৫ শনিবার) আমার ছেলে সবুজের সাথে সিফার আনুমানিক সময় সন্ধ্যা ৭:০৫ মি: দন্দ শুরু হয়। আমি বাধা দিতে গেলে পুত্র বধু সিফা আমাকে পিছনে থেকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে, আমার মাথা ফেটে গিয়ে পরে যাই তখন আবার লাঠি দিয়ে আঘাত করে তা লক্ষভ্রষ্ট হয়ে আমার মুখে লাগে আমার মুখ ফেটে যায়। খবর পেয়ে আমার মেয়ে শিউলি ও জামাতা চানমিয়া এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। শিউলি বলেন বিয়ের পর থেকে সিফা আমার বাবা মাকে দেখতে পারে না, আমার ভাই বাবামাকে কোন কিছু দিলেই দন্দ বাজে। জামাতা চানমিয়া বলেন, আমি তেমব কিছু জানিনা, খবর পেয়ে আমি আমার স্ত্রী সহ আসি, দন্দ মেটাতে গিয়ে আমার মাথায় পিছনে থেকে আঘাত করে, মাথা ফেটে যায়। পিছনে থেকে কে আঘাত করেছে আমি জানি না। আমি আহত অবস্থায় আমার শশুর (আকতার) কে নিয়ে উলিপুর হাসপাতালে আসি।
তবে তাদের এই অভিযোগ পুরো অস্বীকার করে সবুজের স্ত্রী সিফা ও তার পরিবার। সিফা বলেন, সবুজের সাথে আমার বিয়ের ৫/৬ বছর হয়। আমার মা শারীরিক প্রতিবন্ধী। দেখাশোনার সুবিধার্থে বাড়ির কাছেই বিয়ে দেয়, যাতে আমার দেখাশোনা ও খেয়াল রাখতে পারে। আমাদের তিন বছরের একটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় আমাদের সংসারের উন্নয়নের জন্য আমার মা ৮০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়। সবুজ সেগুলো সব নষ্ট করেছে। আমার উপর সবসময় নির্যাতন করতো। অনেক কষ্টে আমি সংসার করে আসছি। সংসার একটু সচ্ছল করতে আমি ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করছি, তবুও আমার উপর নির্যাতন করে। আজকে ঢাকার যাবার কথা, এই নিয়ে আমার সাথে ক্যাচাল শুরু করেছে। আজ সন্ধ্যায় আমার স্বামী সবুজ, শশুর আকতার, ভাগিনা নাহিদ ও তার সংগীয় ক্যাডার বাহিনী দ্বারা আমার ও আমার পরিবারের লোকজনের উপর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ চড়াও হয়। আমার খালার ডানহাতে ছুরি দ্বারা আঘাত করে, খালার হাত কেটে যায়, রক্তপাত শুরু হয়। ভাগিনা নাহিদ আমার চুল ধরে মারপিট শুরু করে, চেন দ্বারা হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। আমাকে নিয়ে সংসার করবেনা বলে হুমকি দেয় সবুজ । সিফার মা কল্পনা বলেন, আমার জামাতা সবুজ আমাকে মারধর করেছে, দেখেন আমার হাতে পায়ে আঘাতের চিহ্ন, চেন দিয়ে মেরেছে। সিফা বলেন আমার স্বামী সবুজের আগে আরেকটি বিয়ে হয়েছিল, তার এরকম আচরণের কারণে সেই সংসার ভেঙে গেছে।
তবে তথ্য অনুসন্ধানে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, সবুজের আগে একটা বিয়ে হয়েছিল ঠিক, কিন্তু তার আগে থেকেই সিফার সাথে সবুজের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে সেই সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে এবং সবুজ সিফাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে সবুজ সিফাকে নিয়ে ঢাকায় থাকে, গার্মেন্টসে চাকরি করে। সিফা সবুজের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল। ঢাকাতেও তিনবার সবুজকে মেরেছে। আজ ঢাকা যাবার সময় সিফার বাবার রিক্সায় বাস কাউন্টারে যাবার কথা। রিক্সায় উঠার সময় সিফার বাবা সবুজের সাথে খারাপ আচরণ করে, আয়- ব্যায়ের হিসাবে চায়, তার কাছে টাকা জমা রাখতে বলে, নাহলে মেয়ের সংসার করাবে না বলে হুমকি দেয়, শুরু হয় উভয় পরিবারের দন্দ।
বিষয়টি নিয়ে ধামশ্রেণী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার আঃ রাজ্জাক বলেন, আমি তাদের চিনি, আজকের মারামারি বিষয়ে জানিনা। খোঁজ নিয়ে দেখবো।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জিল্লুর রহমান বলেন ট্রিপুল নাইনের ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। উভয় পক্ষকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।