কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পে কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে। উপজেলার একাধিক ইউপি সদস্য, সাংবাদিক ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন-এইসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ঘুষ নেওয়া, তথ্য গোপন, সরকারি আদেশ অমান্য ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন পিআইও আতাউর রহমান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য জানায়, প্রকল্পের প্রথম কিস্তির বিল ছাড় করতে প্রতি প্রকল্পে ১৫ শতাংশ এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ঘুষ দিতে হয়েছে পিআইও আতাউর রহমানকে। এসব ঘুষ পরিশোধ করেও প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয় নিয়ে স্থানীয় একজন সাংবাদিক তথ্য অধিকার আইনের আওতায় ৩৩২, ৩৮২ ও ৩৩৯ নম্বর অ্যাপ্লিকেশন নম্বরে পিআইও কার্যালয়ে প্রকল্পের তালিকা, বরাদ্দ, এস্টিমেট ও কাজের আগে-পরের ছবি ও ভিডিও চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু তথ্য প্রদান তো দূরের কথা, মৌখিকভাবে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। অভিযোগকারীর দাবি—“তথ্য চাইলে আমাকেই বেশি ঘামতে হবে”—এমন ভাষায় তাকে হুমকি দিয়েছেন পিআইও আতাউর রহমান। এই আচরণ বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর ৯ ধারা লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পিআইও আতাউর রহমানকে পাওয়া যায়নি, তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২৪ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে কোথাও কোন প্রকল্পের সাইনবোর্ড চোখে পড়েনি। কোন জায়গায় সামান্য মাটি কাটার কাজ শুরু হলেও তা বর্ষাকালে করা হচ্ছে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অযৌক্তিক ও অকার্যকর বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাদের ভাষায়, “মে-জুন মাসের খরা মৌসুমে কাজ না করে বর্ষায় শুরু করা মানে দায়সারা কাজ করা।” এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে এলাহী বলেন, “প্রকল্পের প্রথম কিস্তির বিল দেওয়া হয়েছে, কাজ দেখে দ্বিতীয় কিস্তির বিল দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বিডি করে রাখা হয়েছে।” তবে ৩০ জুনে অর্থবছর শেষ হয়ে যাওয়ায় বিল প্রক্রিয়া কীভাবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এদিকে, স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা আশঙ্কা করছেন সরকারের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে পিআইও এই অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তদন্ত না হলে প্রকৃত সত্য চাপা পড়ে যাবে বলে মন্তব্যও করেন। এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। এবং অতিসত্বর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন এবং তথ্য কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। একই সঙ্গে ঘুষ নেওয়া, তথ্য গোপন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।