নেত্রকোনার কৃষি ভান্ডার নামে খ্যাত কেন্দুয়া। আর সেই কেন্দুয়ায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে চাষ করা হয়েছে সরিষা। উপজেলার যেদিকে তাকাই চোখ যাই যতদূর সেদিকেই শুধু সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ। মাঠজুড়ে সরিষার হলুদ ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করে মধু সংগ্রহ করতে উড়তে দেখা যাচ্ছে মৌমাছির দল।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, এবার আলু চাষের পাশাপাশি সরিষা চাষও হয়েছে ব্যাপক। অথচ কেন্দুয়ায় কমতে বসেছিল সরিষা চাষ। কিন্তু হঠাৎ করে এবার উপজেলাজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে হয়েছে সরিষা চাষ। যা এর আগে কোনোদিন দেখা যায়নি এমন সরিষা চাষ করা। ফলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।বেশকিছু সরিষা চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে প্রায় ৬ থেকে ৭ মণ করে সরিষার ফলন হয়ে থাকে। এতে কৃষকের খরচ হচ্ছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে। আর ফলন পাচ্ছেন ৭ থেকে ৮ মণ।খালিজুড়া গ্রামের সরিষা চাষি সোহেল মিয়া ও শহিদ মিয়া জানান, তারা এবার একেকজন সরিষা চাষ করেছেন ৩ থেকে ৪ বিঘা জমিতে। তুলনামূলক খরচও হয়েছে অনেক কম। সরিষা চাষে বেশি সেচ বা সার পটাশও লাগে না। একটাই কম খরচে আবাদ করে কৃষক লাভবান হয় তা হচ্ছে সরিষা চাষ। বর্তমান বাজারে বারি ১৪ ও বারি ১৮ সরিষা বীজের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। এর ফলনও হয়ে থাকে যথেষ্ট পরিমাণে। আবার আগেও উঠে এসব সরিষা।
চাষি নাজমুল হক বলেন, সরিষার উৎপাদন বেশি হলে মানুষ সরিষার তেল কম দামে পাবে। সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠবে। চাহিদা কমলে সয়াবিন তেলেরও দাম কমে যাবে। সরিষা আবাদে অনেক সুবিধা আছে। আমার তেল কেনা লাগবে না। সরিষা থেকে খৈল হয়। গরুর খৈল কেনা লাগবে না। ফলে সরিষা চাষে লাভ ছাড়া লোকসান নেই বললেই চলে। কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করেছেন এ উপজেলার কৃষকরা। এত পরিমাণে সরিষার চাষ এর আগে কখনো হয়নি।
কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি শারমিন সুলতানা জানান, গত বছর ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। আর এ বছর ১০৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি। সরিষা চাষ একটি লাভজনক আবাদ। এ আবাদে কৃষকের একেবারে কম খরচ হয়ে থাকে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ব্যাপক পরিমাণে এ উপজেলায় সরিষা চাষ করেছেন কৃষকরা। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আশা করা যাচ্ছে সরিষা চাষ করে এবার কৃষক ভালো লাভবান হবেন এবং আগামীতে সরিষা চাষে আরও কৃষক উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন তিনি।