অতীতে দেখা গেছে জেলা প্রশাসক বা অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি জেলাতে যোগদান করলে পরবর্তীতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দপ্তরে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।
– বর্তমানে উল্টো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে—জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সম্মানিত জেলা পরিষদের সদস্যসহ নিজেরাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে ব্যাস্ত।
খাগড়াছড়ির ইতিহাসে এই প্রথম এমন দৃশ্য দেখলেন খাগড়াছড়িবাসী। নিজের দপ্তরের সকল কাজকর্ম ছেড়ে সবাই আজকে এক হয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে।
– এই পরিবর্তনকে অনেকেই প্রোটোকল ও মর্যাদার প্রশ্নে ব্যাখ্যা করছেন। পদমর্যাদা অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ হচ্ছেন প্রটোকলে উপমন্ত্রী পদমর্যাদা আর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন উপসচিব পদমর্যাদা। কেউ মনে করছেন এটি সৌজন্য, আবার কেউ বলছেন এটি পরিষদের ক্ষমতা ও সম্মানের অবক্ষয়ের প্রতীক।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘ সংগ্রাম, রক্তঝরা ইতিহাস এবং শান্তি চুক্তির ফসল। এই পরিষদকে অনেকেই “পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিচ্ছবি” বলে অভিহিত করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে—এই পরিষদ আসলে উন্নতির পথে নাকি অবনতির দিকে যাচ্ছে।
আইন ও কর্তব্য—
জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী পরিষদের মূল দায়িত্ব হলো:
– স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা।
– শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও কৃষি খাতে প্রকল্প গ্রহণ করা
– জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
– সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পার্বত্য অঞ্চলের বিশেষ চাহিদা পূরণ করা।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক সময় পরিষদের সদস্য বা চেয়ারম্যানরা আইন-কানুন সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত নন। ফলে প্রোটোকল, ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
জনগণের উদ্বেগ——-
– খাগড়াছড়িবাসী ও পার্বত্যবাসী মনে করেন, জেলা পরিষদ হলো তাদের আত্মত্যাগের প্রতীক।
– শান্তি চুক্তির মাধ্যমে অর্জিত এই প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করা মানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অবমূল্যায়ন করা।
– তাই পরিষদের আসনে যারা বসবেন, তাদের উচিত আইন, দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা করা এবং কেস স্টাডি করা।
ভবিষ্যৎ——
– জেলা পরিষদ যদি তার সম্মান ও ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, তবে নেতৃত্বে আসীন ব্যক্তিদের প্রশাসনিক শিষ্টাচার, আইনগত জ্ঞান এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে।
– অন্যথায়, এই পরিষদ ধীরে ধীরে তার মর্যাদা হারাবে এবং জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ হবে।
– পার্বত্য শান্তি চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল স্থায়ী শান্তি ও উন্নয়ন—জেলা পরিষদকে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্যই শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ হতে হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের আত্মত্যাগের প্রতীক। তাই এর নেতৃত্বে যারা আসীন হবেন, তাদের উচিত আইন-কানুন সম্পর্কে সচেতন থাকা, দায়িত্বশীল আচরণ করা এবং জনগণের আস্থা রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।