আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)–এর সাম্প্রতিক এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৬৭ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সংখ্যায় এটি প্রায় ২৮ হাজার ৬৬৩টি কেন্দ্র।
এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান এবং ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশের ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে ৮ হাজার ২২৬টি ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’, এবং ২০ হাজার ৪৩৭টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, ভোটের আগে বা ভোট চলাকালে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, এবং গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা ঘটানোর অপচেষ্টা হতে পারে।
এমন আশঙ্কার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করতে ৭ লক্ষাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা থাকবেন।
ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনী নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনে বিচারিক ক্ষমতা প্রাপ্তির পাশাপাশি ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে।
ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে সেনাবাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ অনুমোদন করেছে। এতে সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যৌথ প্রস্তুতি অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা, প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা, এবং বাহিনী কতদিন মাঠে থাকবে এসব বিষয়ে ইসি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি।
প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মো. নাসির উদ্দিন বলেন,
“বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হলে দ্রুত আইন প্রয়োগ সম্ভব হবে। তবে এ ক্ষমতা ব্যবহারে সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি আরও বলেন,
“ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি বৃদ্ধি করা গেলে সহিংসতা প্রতিরোধ অনেক সহজ হবে।”