নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন নয়নের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির পর এবার সাড়ে তিন লাখ চাঁদা না পেলে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ ও উলঙ্গ করে ভিডিও ছাড়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (২১ মে) রাতে নয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে সিসিটিভি এবং মোবাইলে ধারণ করা বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ নতুন দেশের হাতে এসেছে। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন নয়ন কবিরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেহজঙ্গপুর গ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি জেলা যুবদলের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক। একটি ভিডিওতে নয়নকে দেশীয় অস্ত্রহাতে ওই নারীর বাড়িরে সামনে হামলা করতে দেখা যায়। এসময় নয়নকে বলতে শোনা যায়, ‘টাকা নো পেলে ধর্ষণ করে সেটার উসুল নেওয়া হবে।’ আরেকটি ভিডিওতে নয়ন বলেন, ‘এ মহিলার বাড়িতে আসলে সে ভিডিও করে লোকজনকে দেখায়। তাকে আমি রাস্তার উপর উলঙ্গ করে ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেব।’ ভুক্তভোগী নারী (৩৬) কবিরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেহজঙ্গপুর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী নুরুজ্জামানের স্ত্রী। তিনি নূর মঞ্জিল নামে ছয়তলা একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ করছেন। ওই নারী বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমি পরিবার নিয়ে ওমরা করতে সৌদি আরব যাই। আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার পর থেকে যুবদল নেতা নয়ন আমাকে বিদেশে থাকা অবস্থায় হোয়াটসঅ্যাপে কল দিতে থাকেন। বাড়িতে আসার পর সে বিভিন্ন অজুহাতে আমার কাছে সাড়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তিনি প্রতিনিয়ত আমার বাড়িতে আক্রমণ করে। আত্মীয়-স্বজনসহ মেস্ত্রীদেরকে হুমকিসহ মারধর করতে আসেন। তিনি আরও বলেন, ছোট তিনটি ছেলে নিয়ে আমি বাড়িতে একা থাকি। কখন কি হয়ে যায় আমি জানি না। নয়নের অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। বিএনপি নেতা ও সমাজের লোকজনকে বলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। আমার ছেলেরা স্কুল-মাদরাসায় যেতে সে ভয় দেখায়। আমি তার আক্রমাণের অনেকগুলো ভিডিও করে রেখেছি। আমি পরিবার নিয়ে নিরাপদে বসবাস করতে চাই। প্রশাসনের কাছে লিখিত দিলে সে আমাদের বড় ধরণের ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি। জানতে চাইলে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন নয়ন বলেন, ‘তাদের কাছে আমি চাঁদা চাই নাই। প্রতিবেশি হওয়ায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়েছে। আর ভিডিওতে অশালীন হুমকি বিষয়টি ঝগড়ার মধ্যে কি বলতে কি বলেছি তা জানি না।’ তাহলে বার বার কেন গিয়ে গালমন্দ ও হুমকি দিচ্ছেন? জিজ্ঞেস করলে নয়ন বলেন, এ বিষয়ে শুক্রবার (২৩ মে) একটি সামাজিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। সে বৈঠকে যে রায় হয় আমি তা মাথা পেতে নেব। এর আগে আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারীকে মোবাইল ফোনে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন নয়ন বলেন, `আমাকে একলাখ টাকা দিবেন। না দিলে এটার পরিণাম কী হবে তা চিন্তাও করতে পারবেন না। আর এ কথা যদি আপনি-আমি ছাড়া তৃতীয় কানে যায় তাহলে আপনার ঘাড় বাঁকা করে ফেলবো।’ সেই কলরেকর্ড নিয়ে গত ১৫ মার্চ ‘বাঁচতে চাইলে দ্রুত এক লাখ টাকা বিকাশ কর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এ বিষয়ে জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজীম সুমন বলেন, আগের বার অভিযোগ পেয়ে তাকে কঠোর সতর্কতা ও হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। পরে সে ফেসবুকে পদ থেকে অব্যাহতির ঘোষণাও দেন। এবারের বিষয়টি তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদি হয়ে বুধবার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেব।