বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাউলাকাঠী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফাজিল প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৭ নভেম্বরের আদ-দিরাসাতুল হাদিস তৃতীয় পত্র (বিষয় কোড ১১১০১৩) পরীক্ষায় একটি উত্তরপত্র হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে ৩ নম্বর হলের মোট ২৭টি ওএমআর স্লিপ সংগ্রহ করা হলেও উত্তরপত্র পাওয়া যায় মাত্র ২৬টি। একটি উত্তরপত্র না পেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে অস্থিরতা দেখা দেয়। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাটি থানায় সাধারণ ডায়েরির মাধ্যমে জানানোর পরও কেন্দ্রের প্রশাসনিক প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করেননি।
পরদিন ১৮ নভেম্বর মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইয়াসিন মৌখিকভাবে ইউএনওকে বিষয়টি জানালে তিনি ৮১৪ নং স্মারক মারফত জেলা প্রশাসক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে বিষয়টি অবহিত করেন। একই ঘটনায় কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের এ কেন্দ্রটিতে দীর্ঘদিন ধরে অর্থের বিনিময়ে নকলের সুযোগ দেয়া হয়। কেন্দ্রটি উপজেলা সদরে স্থানান্তরের জন্য গত ১৯ অক্টোবর ৭৫৮ নং স্মারকে আবেদন করলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও পরীক্ষা পরিচালনা নীতিমালা অনুসরণে ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলে উত্তরপত্র হারানোর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় প্রশাসনিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ছাত্রসংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গত আলিম পরীক্ষায় ১১ জনের মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৩ জন।
মাদ্রাসাটিতে অতীতে অনিয়মের নজিরও রয়েছে। ২০২৩ সালের ফাজিল পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শিক্ষকও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয়ভাবে পরিচিত।
ঘটনার পর দায়ের করা ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়—পরীক্ষা শেষে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরীক্ষার্থীদের ভিড়ে পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। ওএমআর ছেঁড়া অবস্থায় পাওয়া গেলে সন্দেহ বাড়ে। পরে কক্ষ পর্যবেক্ষকরা ২৭টি ওএমআর পেলেও উত্তরপত্র পাওয়া যায় ২৬টি। খোঁজাখুঁজির পরও অনুপস্থিত উত্তরপত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কক্ষ পর্যবেক্ষক সৈয়দ শফিকুল হক (দোসতিনা আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা) ও মো. ওয়ালিদ (কচুয়া নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা)-এর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইয়াসিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।