দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। ঈদুল আজহার আর মাত্র ক’দিন বাকি। আগামী ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আজহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য দিন-রাত একাকার করে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কর্মকাররা চাকু, দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতিসহ লোহার নানারকম জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এতে টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারশালাগুলো। কয়লার আগুনে রক্তিম আভা ছড়িয়ে লোহায় আফছার আলী খান হাতুড়ির আঘাত। আঘাতে আঘাতে রুপ নিচ্ছে ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটিসহ নানারকম জিনিসপত্র। অক্লান্ত পরিশ্রম করে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে ছুরি, চাকু, চাপাতি, দা ও বঁটিতে পরিণত হচ্ছে। এসব লৌহজাত বস্তুতে শান দিচ্ছেন কেউ কেউ। কেউবা আবার সহকর্মীর কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কর্মকারদের তৈরিকৃত এসব লৌহজাত সামগ্রী আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। কাজের চাপে যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে দিনরাত কাজ করেও তারা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।
ছুরি, দা ও বঁটি শান দিতে আসা উপজেলার গ্রামীণ শহর রানীরবন্দরে কয়েকজন জানান, সারাবছর এগুলো ব্যবহার হয় না। ফলে মরিচা ধরেছে। শান দিয়ে পুরনোগুলো দিয়েই পশু কোরবানির কাজ চালিয়ে নেব। অনেকে আবার নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন এসব সরঞ্জাম।
উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের নশরতপুর গ্রামের দেউরিপাড়ার কর্মকার রবীন চন্দ্র রায় (৩৮) বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতির দখলে বাজার হওয়ায় এখন আর কদর নেই কামার শিল্পীদের।
দেউরিপাড়ার আরেক কর্মকার প্রবীর চন্দ্র রায় (৪৫) জানান, কোরবানির আরো কয়েকদিন বাকি রয়েছে। এখনো পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। গত বছরে ব্যবসা খারাপ হলেও এ বছর আগের তুলনায় বিক্রি অনেকটা ভালো হবে বলে আশা করছি। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদে তাদের আয়-রোজগার ভালো হয়।
কর্মকাররা জানান, এমনিতে সারাবছর কম-বেশি কাজ থাকে। লোহার দাম ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা খুব একটা ভালো নেই। কোরবানির ঈদের আগে পশু জবাই কাজের হাতিয়ার সংগ্রহের জন্য মানুষ তাদের নিকট ভিড় করেন। এ সময় ব্যস্ততার শেষ নেই। তারা আরও বলেন, এটি অনেক কষ্টের পেশা। শক্তি ও কৌশলের মিশেলে কাজ করতে হয়। পরিশ্রম অনুযায়ী মুনাফা অনেক কম। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করিনি। ছুরি, চাকু, চাপাতি, দা ও বঁটি আগের দামেই বিক্রি করছি। বংশ পরম্পরা ধরে রাখতেই এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছি। পূর্ব-পুরুষদের এই পেশা ধরে রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।