চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় গেটম্যানের দাবিতে ট্রেন অবরোধের টানা দুই ঘন্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে রেলপথ ছেড়েছেন স্থানীয়রা। এতে খুলনাগামী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম. সাইফুল্লাহ এবং সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমানের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নিয়ে মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে পুলিশ ফাড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জগদীশ চন্দ্র বসু দৈনিক দেশ বুলেটিন কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আমিরপুর রেলগেটে ট্রেনে কাটা পড়ে জীবন (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেলসহ ওই যুবক ট্রেনের নিচে চাপা পড়েন। এরপর ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে আটকে মোটরসাইকেলটি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে চলে যায়।
নিহত জীবন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের আমিরপুর গ্রামের মোহাম্মদ আরমান আলীর ছেলে। দুপুরে বাড়ীতে খাবার খেয়ে কর্মস্থলে যাবার পথে দূর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি সিগারেট কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে, নিহতের ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে রেলগেটে গেটম্যানের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী কপোতক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি অবরোধ করে রাখেন। এতে খুলনাগামী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।ট্রেনে আটকে পড়া যাত্রীরা চরম দূর্ভোগে পড়েন। ভ্যাপসা গরমে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু, গেটম্যান থাকলে হয়তো তিনি বেঁচে যেতেন। দীর্ঘদিন যাবত আমিরপুর গ্রামের একমাত্র রেলগেটটি অরক্ষিত। এখানে বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত গেটম্যান দিতে হবে তারপর ট্রেন ছাড়া হবে।
তারা জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে আমিরপুর গ্রামের রেলগেটে আসেন ওই যুবক। সে সময় একটি ট্রেন যাচ্ছিল। ট্রেনটি চলে গেলে মোটরসাইকেলযোগে লাইন পার হতে গেলে অপর লাইন থেকে আসা খুলনাগামী রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই জীবন মারা যান। ট্রেনের ইঞ্জিনে নিচে মোটরসাইকেলটি পড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে টেনে নিয়ে যায়।
এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান। আগামীকালের মধ্যেই গেটম্যান দেওয়া হবে আশ্বাস দিলেও বিক্ষোভকারীরা রেলপথ ছাড়েননি। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ওসিকে লিখিত প্রতিশ্রতি দিতে বলেন।
বিক্ষোভকারীদের ওসি বলেন, এখানে অবশ্যই গেটম্যানের প্রয়োজন। আমি তিন দিনের সময় নিচ্ছি, গেটম্যানের জন্য যেখানে যেখানে কথা বলার প্রয়োজন আমি কথা বলব।
ওসির আশ্বাসে অবরোধকারীরা রেলপথ না ছাড়লে ঘটনাস্থলে আসেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম. সাইফুল্লাহ। তিনি অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন জানালে অবরোধকারীরা রেলপথ ছেড়ে দেন। পরে টানা দুই ঘন্টা আটকে থাকা ট্রেনটি যাত্রা শুরু করেন।
এদিকে, ঘটনার পর নিহত জীবনের বাড়িতে যান ইউএনও। তিনি নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে পুলিশ ফাড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জগদীশ চন্দ্র বসু দৈনিক দেশ বুলেটিন কে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ইউএনও এবং ওসি স্যারের হস্তক্ষেপে অবরোধকারীরা রেলপথ ছেড়ে দেন। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। যেহেতু এটা রেলওয়ের অধীনে। গেটম্যান যেন দ্রুত দেয়া হয় এ জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন স্থানীয় প্রশাসন।