জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার এবং বারবার ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে সর্বস্ব হারানো খুলনার কয়রা উপজেলার শত শত নারী-পুরুষ তাদের সামাজিক সুরক্ষা, পুনর্বাসন ও টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে এক অনন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। বুধবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদের সামনে কারিতাসের বিএমজেড প্রকল্পের সহযোগিতায় এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে উত্তর বেদকাশি ও সদর ইউনিয়নের দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অংশ নেয়। তারা উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ অভিবাসন এবং স্থানচ্যুতির শিকার জনগোষ্ঠীর জন্য দ্রুত সরকারি পদক্ষেপের দাবি জানান।কয়রার মানুষের প্রধান দাবি: অবিলম্বে চাই সুরক্ষা ও কর্ম,বক্তারা সম্মিলিতভাবে যে মূল দাবিগুলো তুলে ধরেন, সেগুলোর মধ্যে প্রধান ছিল:
টেকসই বেড়িবাঁধ: নদীর ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে অতিদ্রুত মানসম্মত ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ নিশ্চিত করা।
সামাজিক সুরক্ষা: কয়রার অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের জন্য আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন: গৃহহীনদের জন্য স্থায়ী বাসস্থানের সুবিধা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
জলবায়ু তহবিল: কেন্দ্রীয় জলবায়ু তহবিল থেকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা প্রদান করা।
“আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি”
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, সিডর, আইলা, ইয়াসের মতো মহাদুর্যোগ বারবার আঘাত হানছে। কিন্তু পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির হওয়ায় মানুষগুলো দারিদ্র্য এবং অনিশ্চয়তার এক দুষ্টচক্রে আটকে আছে। উপস্থিত বক্তারা এই কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, “জলবায়ু সংকটের দায় আমাদের নয়, কিন্তু এর মাশুল দিতে হচ্ছে কয়রার মানুষকে। আমরা প্রকৃতির কাছে বারবার হারছি, কিন্তু রাষ্ট্রীয় সহায়তায় গতি আসছে না।” কয়রা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম শাহাবুদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেন, “যতদিন পর্যন্ত টেকসই বেড়িবাঁধ না হচ্ছে, ততদিন কয়রার মানুষকে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করতে হবে। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন—সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।” দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাবের সদস্য শরিফা খাতুন আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “আমরা ভিটেমাটি হারিয়েছি, কাজ হারিয়েছি। এখন পুনর্বাসনের দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমাদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অন্ধকার।”
উপস্থিত ছিলেন যারা কারিতাসের ডিআরআর-সিসিএ প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমানের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের উপজেলা সেক্রেটারী মাওলানা শেখ সাইফুল্লাহ, সাংবাদিক মোস্তফা শফিকুল ইসলাম, সদর উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা গন অধিকার পরিষদের সভাপতি ইয়াছিন আলী, উপজেলা পানি কমিটির সদস্য আলহাজ্ব দ্বীন মোহাম্মদ, ডাঃ নুর ইসলাম খোকন, সমাজসেবক মুনছুর রহমান সানা, মোল্যা মনিরুজ্জামান মনি, কামরুল ইসলাম মোল্যা সহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য তাছলিমা খাতুন, রোমিছা খাতুন, আঃ মান্নান প্রমুখ।
কয়রার এই মানববন্ধন শুধু কিছু মানুষের দাবি নয়, এটি দেশের জলবায়ু-উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষার এক জোরালো কণ্ঠস্বর। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।