খুলনার কয়রা উপজেলায় কৃষিখাতে টেকসই উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই,আমাল ফাউন্ডেশন এবং টার্কিশ কোঅপারেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন এজেন্সি (টিকা)-এর যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে “ক্লাইমেট স্মার্ট টেকনিকস” শীর্ষক এক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারটি ২০২৪ সাল থেকে চলমান একটি প্রকল্পের অংশ, যার মূল লক্ষ্য জলবায়ু সহনশীল কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা।
স্মার্ট কৃষির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন
এই প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৪০ জন নারী কৃষক ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক স্মার্ট কৃষি কৌশল অবলম্বন করছেন। মাত্র ২-৩ শতক ছোট জমিতে লাউ, কুমড়া, ধুন্দল, বরবটি, করলা, শসা, পুঁইশাক, ঝিঙে, মরিচ, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন মৌসুমী সবজি উৎপাদন করে তারা একদিকে যেমন পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছেন, তেমনি অন্যদিকে মাসে ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে পরিবারের আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। বর্তমানে আরও ৪০ জন নারী এই উন্নত কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে আরও বেশি নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুলে দেবে।
সেমিনারে অতিথিবৃন্দ ও প্রকল্পের সাফল্যগাঁথা
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিকা’র কো-অর্ডিনেটর জনাব মোহাম্মদ আলী আরমাআন এবং সহকারী কো-অর্ডিনেটর জনাব মঞ্জুর এলাহী। আমাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মিস ইশরাত করিম, সহযোগী প্রোগ্রাম ম্যানেজার জনাব জাহিদুল ইসলাম, এবং সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার সামিরা মেহনাজও উপস্থিত ছিলেন।
আমাল ফাউন্ডেশনের ফিল্ড ম্যানেজার জনাব আজিজুল হক প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি এবং নারীদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে কীভাবে এই নারীরা প্রতিকূল আবহাওয়া এবং সীমিত সম্পদের মধ্যেও নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। সেমিনারে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
টিকা’র কো-অর্ডিনেটর জনাব মোহাম্মদ আলী আরমাআন এই প্রকল্পকে অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং অনুপ্রেরণামূলক বলে মন্তব্য করেন। তিনি উপকারভোগীদের আত্মনির্ভরশীলতার গল্প শুনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। এছাড়া, স্থানীয় ইউনিয়ন অফিসার জনাব [নাম উল্লেখযোগ্য] এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এটি স্থানীয় কৃষিখাতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
অনুষ্ঠান শেষে উপকারভোগী নারী কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণ সনদ এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এই ধরনের উদ্যোগ কেবল কৃষিখাতের উন্নয়নই নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কয়রার এই সাফল্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রসারে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আশা করা হচ্ছে।