জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খননের পর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনযোগ্য গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জামালপুর-১ গ্যাস অনুসন্ধান কূপ হবে দেশের ৩০তম গ্যাসক্ষেত্র।
এ কূপে গ্যাস মজুত রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০ কোটি (১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন) ঘনফুট এবং উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত আছে ৭২০ কোটি (৭ দশমিক ২ বিলিয়ন) ঘনফুট। দৈনিক গড়ে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ঘনফুট হারে প্রায় পাঁচ বছর এই কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
জামালপুর-১ গ্যাস অনুসন্ধান কূপ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কূপ খনন করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল দুই হাজার ৬০০ মিটার গভীরতার তিনটি স্তরে ডিএসটির (ড্রিল স্টেম স্টেট) মাধ্যমে সফলভাবে কূপ খনন শেষ হয়। গত ৩১ মে অগ্নি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্যাসের সন্ধান মেলে। এরপর সেখান থেকে পরীক্ষামূলক গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই কূপের ১ হাজার ৪৪১ থেকে ১ হাজার ৪৪৪ মিটার গভীরতায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনযোগ্য গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানা যায়, ১১২৪ পিএসআই (পাউন্ডস পার স্কোয়ার ইঞ্চ) চাপে দৈনিক গড়ে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ঘনফুট হারে প্রায় পাঁচ বছর এই গ্যাস কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এর আর্থিক মূল্য বাপেক্স মার্জিনে ৮২ কোটি টাকা, ভোক্তাপর্যায়ে ৪৬৮ কোটি টাকা এবং এলএনজি আমদানি মূল্য ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, উৎপাদিত গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে যমুনা সার কারখানায় দৈনিক চার-পাঁচ মিলিয়ন (৪০ থেকে ৫০ লাখ) ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। যমুনা সার কারখানার দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪ কোটি (৪০ মিলিয়ন) ঘনফুট গ্যাস। জামালপুর-১ কূপ থেকে যমুনা সার কারখানার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। সে কারণে এ কারখানায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করতে আরো ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
উল্লেখ্য, মাদারগঞ্জের তারতাপাড়া গ্রামে ১৯৮৪ সালে সংগৃহীত সিসমিক উপাত্ত থেকে সর্বপ্রথম লিড বা প্রসপেক্টের ধারণা পাওয়া যায়। পরে ২০১৪ সালে ওই এলাকায় দ্বিমাত্রিক সিসমিক জরিপ এবং ২০১৫ সালে ক্লোজ-গ্রিড সিসমিক সার্ভে সম্পন্ন করা হয়। ২০১৭ সালে আজারবাইজানের গ্যাস অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠান কূপের খননকাজ পেলেও একপর্যায়ে কাজ শেষ না করে প্রতিষ্ঠানটি চলে যায়। সাত বছর পর বাপেক্স চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন কার্যক্রম শুরু করে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, জামালপুর-১ গ্যাস কূপে যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া গেছে, তা আশানুরূপ নয়। এখানে দৈনিক গড়ে চার-পাঁচ মিলিয়ন (৪০ থেকে ৫০ লাখ) ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব। এই কূপ থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আরেকটি কূপ খনন করা হবে। কূপটি খনন করলে আরো ভালোভাবে বিষয়টি জানা যাবে।
এর আগে টুডি, থ্রিডি সার্ভেয়ার করে এটার সম্ভাব্যতা আরো নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হবে। উল্লেখ করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, তবে এখানে যে গ্যাস পাওয়া যাবে সেটা নষ্ট করা হবে না। তিনি আরও বলেন, কূপের গ্যাস সরাসরি ব্যবহার করা যায় না, রিফাইন প্রসেস করতে হয়। যেহেতু এখানে বড় কোনো বিনিয়োগ হবে না, যদি বড় কোনো ডিপোজিট পাওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে। এ জন্য এখানে একটা মোবাইল প্রসেসিং প্ল্যান আনব, সেটা থেকে গ্যাস প্রসেস করে স্থানীয়ভাবে শিল্প কারখানায় সরবরাহ করা হবে।