জেলেদের মারধরসহ আহরিত কাঁকড়া ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে। সুন্দরবনে জেলেদের আহরিত ২০ লাখ টাকা মূল্যের কাঁকড়া ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে নদীতে জেলেদের নৌকায় হামলা ভাংচুর ও মারধরসহ ৬ জেলেকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবী করেছেন ফিরে আসা জেলেরা। গত ২১নভেম্বর মঙ্গলবার ভোর রাতে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে নন্দবালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার বিকালে মোংলা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেরা এ তথ্য জানান। লিখিত বক্তব্যে জেলে তরিকুল, ওমর গাজী, আলমঙ্গীর ও রাজিব শেখ বলেন, বনবিভাগের কাছ থেকে পাস-পারমিট (অনুমতিপত্র) সংগ্রহ করে গত ১২নভেম্বর ৪০জেলে ১২টি নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের দুবলা এলাকায় কাঁকড়া আহরণ করতে যান। পরে গত ২১নভেম্বর রাতে ৪টি নৌকায় ৪০মণ কাঁকড়া নিয়ে লোকালয় ফিরে আসছিলেন তারা। এ সময় পশুর নদীর নন্দবালা এলাকায় পৌঁছালে চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন বনরক্ষী বহিরাগতদের সাথে নিয়ে জেলেদের নৌকা আটক করেন। তখন জেলেরা তাদের বৈধ অনুমতিপত্র দেখালেও বনরক্ষীরা জেলেদের কাছে অনৈতিকভাবে অর্থ দাবী ও বাকবিতান্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে জেলেদের মারধর, নৌকা ভাংচুর করে ও ইউনুছ আলী(৫৫), আজিজুল(২২), রাজ্জাক(৩০), জাহিদুল(২৩), মিজান(৩০) ও তোফাজ্জোল(৩৫) নামের ৬জেলেকে আটকসহ নৌকা এবং নৌকায় থাকা আহরিত কাঁকড়া ছিনিয়ে নেয়।
এছাড়া হামলা ও মারধরের সময় রুমি শেখ(১৮) ও আলমঙ্গীর(২৬) নামে অপর দুই জেলে নিখোঁজ হয়। ফিরে আসা জেলেরা বলেন, সুন্দরবন ও সাগর উপকুলে কাঁকড়া আহরণ করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়লে লোকালয় থেকে নৌকা ও ট্রলার পাঠিয়ে উদ্ধার করা হয়। সেই ট্রলারটিও ভাংচুর করে নিয়ে গেছে বনরক্ষীরা। জেলেরা বলেন, তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া আহরিত ৪০মণ কাঁকড়ার (রপ্তানীযোগ্য) বাজার মূল্য প্রায় ২০লাখ টাকা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জেলেরা অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে ঘুষ ও অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিতে বনরক্ষীদের হাতে নির্যাতন ও হয়রানীর বিষয়টি এখন নিত্যনৈমক্তিক ঘটনা।
জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, তাদের ট্রলার, নৌকা ও কাকড়া আহরণে বনবিভাগের প্রদত্ত পাস রয়েছে। বনবিভাগই পাস দেন, আবার সেই পাস থাকা স্বত্বেও আবার অবৈধ বলে ঘুষ দাবী করে আটক এবং হয়রানী করছেন। পাস থাকা স্বত্বে বনবিভাগকে ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিতে হয়। আর এ ঘুষ না দিলে পাসও তখন অবৈধ হয়ে যায় বনবিভাগের কাছে।
সুন্দরবনে জেলেদের কাঁকড়া আহরণে পাস-পারমিট থাকার কথা স্বীকার করে চাঁদাপাই স্টেশন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, কাঁকড়া আহরণের বৈধতা থাকলেও অবৈধ পরিবহন ব্যবস্থার কারণে কাঁকড়া ও ৪টি নৌকা এবং ১টি নৌকা ট্রলারসহ ৬জেলেকে আটক করা হয়েছে। তবে জেলেদের মারধর ঘটনা অস্বীকার করেন তিনি। এছাড়া দুই জেলে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান।
এ বিষয়ে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেব বলেন, জেলেরা তাদের পাস দুবলায় জমা না দেয়াসহ কাঁকড়া পরিবহণে অবৈধভাবে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ট্রলার, নৌকা ও কাঁকড়া জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উদ্ভুত পরিস্থিতির এ বিষয়ে সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ঘটনার খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। দোষী যে হোক বনরক্ষী জেলেরা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।