গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে চাঁদা দাবি, মারপিটের অপরাধে দুর্ধর্ষ ৫ ছিনতাইকারীকে অস্ত্র শস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাত পৌঁনে ২ টার দিকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হল- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার সোনারামপুর এলাকার মোঃ শহীদ মিয়ার ছেলে মোঃ তপন মিয়া (৩২), মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার পাঁচ্চর এলাকার মোঃ সালামের ছেলে রাশেদুল ইসলাম রাসেল (২২), বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার জাবেদ আহম্মেদের ছেলে মোঃ রিফাত (১৯) এবং কাজিরহাট থানার মাধবরায় এলাকার মোঃ শফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ নকিব (১৯) এবং নরসিংদী সদর থানার রাঙ্গামাটিয়া এলাকার মৃত নাছির উদ্দিনের ছেলে মোঃ নাদিম (২৯), তারা বর্তমানে টঙ্গীস্থ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে নিয়মিত ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে।
জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে টঙ্গী পূর্ব থানার হিমারদিঘী এলাকার হকের মোড়ের পাশে দিদারের রিক্সার গ্যারেজের ভিতরে সুমন মিয়া (৪৭) নামের এক ব্যক্তিকে জোরপূর্বক আটক রেখেছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে জিএমপি’র অপরাধ দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের দিক-নির্দেশনায় টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে আটককৃত ব্যক্তিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে। এসময় গ্রেফতারকৃত তপনের ডান হাতে থাকা লাল কসটেপ দ্বারা মোড়ানো ০১ টি অবিস্ফোরিত ককটেল এবং তার কোমড়ে গোজা ১৭ ইঞ্চি লম্বা ০১ টি ষ্টীলের তৈরী ছোরা, নাদিমের ডান হাতে থাকা লাল কসটেপ দ্বারা মোড়ানো ০১ টি অবিস্ফোরিত ককটেল এবং তার কোমড়ে খবরের কাগজ দ্বারা মোড়ানো গোজা ৯ ইঞ্চি লম্বা ০১ টি লোহার তৈরী চাকু, রাশেদুল ইসলামের ডান হাতে থাকা ৩১ ইঞ্চি লম্বা ০১ টি ষ্টীলের তৈরী তলোয়ার, নকিবের ডান হাতে থাকা ০১ টি অস্ত্রশস্ত্র তৈরী করার ষ্টীলের পাত এবং তার পরিহিত প্যান্টের ডান পকেটে ০১ টি লোহার তৈরী বাটাল, রিফাতের ডান হাতে থাকা ২৭ ইঞ্চি লম্বা ০১ টি লোহার তৈরী রামদা এবং পার্শ্ববর্তী রুমের বিছানার নিচ থেকে ০১ টি চাকু, নাট খোলার যন্ত্র, ৩ টি হাতুড়ী উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, আটককৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারে নাই। উদ্ধার করা অস্ত্র শস্ত্র আসামীরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার করে থাকে। অপহৃত ব্যক্তি সুমন হল- ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানার বান্দার ঘাটা এলাকার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে। উনি টঙ্গী পশ্চিম থানার খাঁ পাড়া পুরান বাজার এলাকায় বসবাস করে এবং তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সাযোগে কেমিক্যাল কিনতে টঙ্গীর নতুন বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে হিমারদীঘি মা টাওয়ারের সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌছালে গ্রেফতারকৃত আসামীরা সহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা কৌশলে তাহার অটোরিক্সাটি ভাড়া নেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে এবং তাকে ১ লাখ টাকা চাঁদার জন্য মারপিট করে নীলাফুলা জখম করে। আসামীরা আরও টাকা পাওয়ার জন্য তাহার মোবাইল হতে তাহার পরিবারের লোকজনের মোবাইলে ফোন করে আরও টাকা দাবী করে। টাকা না দিতে পারলে তাকে মারধর করিতে থাকে। আসামীদের নিজ নিজ হেফাজতে অবিস্ফোরিত ককটেল, অস্ত্রশস্ত্র এবং অস্ত্র শস্ত্র তৈরীর যন্ত্রপাতি রেখে এবং একই উদ্দেশ্যে সুমন মিয়া কে অপহরণ করে আটক রেখে চাঁদা দাবী ও চাঁদা আদায় ও মারপিট করিয়া নীলাফুলা জখম করায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড-১৮৬০ এর ৩৬৫/৩৪২/৩৮৫/৩৮৬/ ৩২৩/৩৪ তৎসহ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(এফ) তৎসহ ১৯০৮ সনের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এবিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরিদুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।