পরিচয় জানা যায়নি। বয়স আনুমানিক ৩০ হবে। চ বগির তিন নম্বর জানালা দিয়ে দুই হাত মাথা বের করে তিনি ঝুলছেন। হাত দুটি পুড়ে কোঁকড়া হয়ে গেছে, শুধু চেহারাটা একটু বোঝা যাচ্ছে।বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী লোকটি ট্রেনের জানালা দিয়ে হাত ও মাথা বের করে আহাজারি করেছিলেন- ‘ভাই আমার স্ত্রী-সন্তানকে বাঁচান।’তাকে বেরিয়ে আসার কথা বললেও তিনি স্ত্রী-সন্তানকে বের করার জন্য বার বার আকুতি জানাচ্ছিলেন। এর পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে ওই ব্যক্তি মারা যান।দুপুর একটায় বেনাপোল থেকে ১৬টি বগি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ট্রেনটি। এর মধ্যে ঙ বগি পাওয়ার কার, চ-যাত্রী ছ-যাত্রী বগি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আর জ বগির একটি অংশ পুড়েছে।রাত সাড়ে নয়টার দিকে গোপীবাগ ট্রেনটি থেমে যাওয়া স্থানে এসে দেখা যায়, চ-বগির তিন নম্বর জানালা দিয়ে দুই হাত বের করা মাথা বের করা একজনের মরদেহ জ্বলছে।
এখন পর্যন্ত তার পরিচয় জানা যায়নি।সন্ধ্যার পর থেকে রেললাইনের গোপীবাগ এলাকায় আড্ডা দেওয়া মো. রুবেল বলেন, এখানে সন্ধ্যার পর থেকেই কয়েকজন বন্ধু মিলে লুডু খেলছিলাম। নয়টার আগে ট্রেনটি গোপীবাগ এলাকায় এসে থেমে যায়। এ সময় পাওয়ার কারের পর চ বগিতে অল্প আগুন জ্বলছিল। এর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পুরো বগিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ছ আর ঙ বগিতে আগুন ছড়ায়। এ সময় অনেক মানুষ ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে নামার চেষ্টা করেন।
তাদেরকে উদ্ধার করে আশপাশের হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরেই বগীর সংযোগ থেকে ইঞ্জিনসহ ৭-৮টা বগি খুলে দেওয়া হয়। পরে সেটি কমলাপুরের দিকে চলে যায়। কিছু সময় পরে একটি ইঞ্জিন এসে পুড়ে যাওয়া এসব বগি নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।স্থানীয় রুবেল বলেন, সায়দাবাদ রেলগেট পার হওয়ার পরে রেলে আগুন দেখা যায়। আগুন অবস্থায় গোপীবাগ এলাকায় ট্রেনটি থামালে অসংখ্য যাত্রী ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়েন।তিনি বলেন, ‘চ বগির মৃত ব্যক্তির স্ত্রী সন্তান বাঁচানোর আহাজারি দেখে সবাইকে কেঁদেছে। আমাদের সামনে এই লোকটি পুড়ে মারা গেছে। আমরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনে রক্ষা করতে পারিনি।’এই দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। রাত ১২টা পর্যন্ত এখনও উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রেখেছে ফায়ার সার্ভিস।