ঘুষ না পেয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল ও হয়রানির অভিযোগে ডিবি পুলিশের এসআই কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সাংবাদিক মো. শফিউজ্জামান রানা সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুর ৩টায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের নকলা উপজেলা শাখায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘একজন সৎ সাংবাদিক হিসেবে আমি আজ এক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রতিহিংসার শিকার। ঘুষ না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।’’
‘৫০ হাজার টাকা দাবি করেন এসআই কামরুজ্জামান’
শফিউজ্জামান রানা জানান, জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই কামরুজ্জামান তিন মাস আগে ফোন করে তাকে ডিবি অফিসে ডেকে নেন এবং এক মামলায় তার পক্ষে প্রতিবেদন দেওয়ার শর্তে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
তিনি বলেন, “আমি ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি বলেন, টাকা না দিলে প্রতিবেদন আপনার বিপক্ষে যাবে।”
মামলার প্রেক্ষাপট: জমি ও দাম্পত্য কলহকে হাতিয়ার করা হয়েছে
সাংবাদিক রানা আরও জানান, তার সাবেক স্ত্রী জান্নাতুল মল্লিকা মুন্নি, যিনি তার সঙ্গে প্রায় ১৩ বছর সংসার করেছেন, নকলায় তার ক্রয়কৃত জমির ওপর বসবাস করে আসছিলেন। সেই জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করেই মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।
মোকাদ্দমা নং ৫০/২০২৫ অনুযায়ী তাকে এমনভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যেন তিনি ওই জমি দখল করে, ঘরবাড়ি ভেঙে, ভাড়াটিয়াকে তাড়িয়ে দিয়েছেন এবং সীমানার বেড়া ভেঙে ৫ হাজার টাকার ক্ষতি করেছেন। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন।
‘আমি ঘরজামাই ছিলাম না, তারা সাক্ষী বানিয়েছে দূরের আত্মীয়দের’প
সাংবাদিক রানা অভিযোগ করেন, বাদীপক্ষের অভিযোগে সাক্ষী করা হয়েছে বাদীর বাবা, ভাই, ভাবি ও ছেলেকে— যারা সবাই শেরপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা। অথচ ঘটনাস্থল নকলা উপজেলায়, যেখানে তিনি ও বাদী দীর্ঘ ১০ বছর সংসার করেছেন। আশপাশের কোনো প্রতিবেশী বা নিরপেক্ষ ব্যক্তি সাক্ষী হিসেবে নেই।জে
তিনি বলেন, ‘‘বাদীর বান্ধবী রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ থেকেই আমি ডিভোর্স দেই। আজ সেটাকেই ইস্যু বানানো হচ্ছে। অথচ আমি ২০১৪ সালে জমি ক্রয় করি, বাড়ি নির্মাণ করি। যারা বলছে আমি দখল করেছি, তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন জমি করতে কত টাকা লেগেছে, কোন দোকান থেকে মালামাল কেনা হয়েছে— কোনো তথ্যই তারা দিতে পারবে না।’’
‘সাংবাদিক পরিচয় দিতেই ক্ষেপে যায় এসআই কামরুজ্জামান’
সাংবাদিক রানা বলেন, ‘‘আমি তাকে জানাই, আমি একজন নির্যাতিত সাংবাদিক, ঘুষের কাছে মাথা নত করিনি কোনোদিন, আর করবোও না। তখনই তিনি আমার প্রমাণপত্র উপেক্ষা করে একতরফা মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন।’’
‘মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনের মূল ৫টি দিক’
এসআই কামরুজ্জামানের তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ রয়েছে: ১. ১৩ বছর সংসার করার পর ডিভোর্স।
২. জমির দখল নিয়ে অনধিকার প্রবেশ ও তালা লাগানো।
৩. ঘর ভাঙচুর ও ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে দেওয়া।
৪. বাধা দিলে বাদী ও স্বাক্ষীদের হুমকি।
৫. বেড়া ভেঙে ৫ হাজার টাকার ক্ষতি।
রানা বলেন, ‘‘এসব কথা টাকার বিনিময়ে লেখা হয়েছে। সৎভাবে তদন্ত করলে এসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’’
‘আদালত ও প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি’
সংবাদ সম্মেলনের শেষ অংশে তিনি বলেন, ‘‘একজন সাংবাদিকের সম্মান নষ্ট করতেই এ অপচেষ্টা। আমি প্রশাসনের কাছে আবেদন করছি— তদন্ত করে সত্য বের করুন। এসআই কামরুজ্জামানের মতো অসাধু কর্মকর্তা পুলিশে থাকার যোগ্য নয়। জেলা পুলিশ সুপার যদি ব্যবস্থা না নেন, আমি আইজিপির কাছে যাবো।’’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মো. হযরত আলী, মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাইসুল ইসলাম রিফাত, কোষাধ্যক্ষ আইনুল নাইম, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মিয়া, সদস্য মো. জহিরুল ইসলামসহ উপদেষ্টা ইত্তেফাকের সাংবাদিক মোঃ হযরত আলী, ডিএসবি রুহুল আমীন সহ অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ।