ঢাকার বনানীতে মাদক ব্যবসার প্রধান হোতা সোর্স শহীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। গোডাউন বস্তি, বেদে বস্তি, এরশাদ নগর বস্তি, কড়াইল বস্তি, বেলতলা, টিএন্ডটি স্যাটেলাইট, কড়াইল আনসার ক্যাম্প, মহাখালী হাজাড়িবাড়ী এলাকাসহ বনানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছে বলে অভিযোগ এলাবাসীর।
কড়াইল বস্তির মাদক নির্মূল কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছে, মহাখালী টিএন্ডটি মাঠের পশ্চিম পাশে গোডাউন বস্তির মৃত মাকু মিয়ার ছেলে শহীদ ওরফে ফর্মা শহীদ প্রশাসনের নাকের ডগায় এক ঝাক মাদক ব্যবসায়ী লালন করে দেদারসে মাদকের রমরমা বানিজ্য করে আসছে। রাতের বেলায় পুলিশের সোর্স হিসেবে বনানী থানার একাধিক এসআই এর সাথে তাকে দেখা যায়। রহস্যজনক কারনে পুলিশ তার অপকর্ম জেনেও নিরব ভূমিকা পালন করছে। এমন কি পুলিশের বিশেষ অভিযানেও গাড়ী বহরে সোর্স হিসেবে তাকে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৫ সালে বিস্ফোরক ও অবৈধ পিস্তল গুলিসহ বনানীর হিন্দুপাড়া বস্তি থেকে র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয় শহীদ। ওই সময় পাবলিকের গণধোলাইয়ে নিহত বস্তির শীর্ষ সন্ত্রাসী ফারুখ উরফে ফরুর প্রধান সহযোগী ছিল শহীদ। জেল থেকে সাজা খেটে বের হওয়ার পর পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করে। পুলিশের মোটরসাইকেল, হ্যান্ডকাফ, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ব্যবহার করায় অনেকে তাঁকে পুলিশই মনে করে। বর্তমানে হিন্দুপাড়া বস্তি নেই। বস্তি উচ্ছেদ করে সেই জায়গায় রাজউকের কোটায় তৎকালীন বিএনপির এমপিদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই এলাকা এখন বনানী ২/২ রোডের বিএনপি পল্লী হিসেবে পরিচিত। হিন্দুপাড়া বস্তি উচ্ছেদের পর জেল থেকে বেরিয়ে শহীদ বনানীর গোডাউন বস্তিতে তার নতুন ঘাঁটি গড়ে তুলে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে যুবদলের রাজনীতি করতেন। তৎকালীন বিএনপির কমিশনারের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে গোডাউন বস্তিতে একটি ঘর তুলে থাকার সুযোগ পেয়েছিল। পরে পুলিশের সোর্স হিসেবে যোগদান করার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঝিল ভরাট করে আরও ১০-১৫ টি ঘর তুলে ভাড়া দেয়। এগুলোর মধ্যে টিএন্ডটি মাঠ ঘেঁষে বনানী যাওয়ার রাস্তার পাশে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজ সহ চারটি দোকান ভাড়া দিয়েছে সোর্স শহীদ। যার সবগুলোই সরকারি জমিতে অবৈধ দখল। এখানে শহীদ জুয়া, মাদক ও দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চা দোকানি জানান, শহীদ একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী হয়ে কিভাবে পুলিশ তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আমার বোধগম্য হয় না। প্রশাসনিক অনেক গোপনীয় তথ্যও সহজেই পাচার হয়ে যায় এটা বুঝার আর বাকি থাকে না। বনানী থানার কতিপয় স্বার্থাম্বেসী এসআই মাদক ব্যবসায়ী সোর্স শহীদকে মটর সাইকেলে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আশা করব বনানী থানা পুলিশের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
জানা গেছে, সোর্স শহীদ নিজের মাদক ব্যবসাকে সহজ করতে নিরিহ মানুষকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ধরিয়ে দেয়। আবার তার মাদক ব্যবসা এবং অপরাধ কর্মকান্ডের কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়। সেই মামলার সাক্ষীও হয় শহীদ নিজে। অথবা তার গ্রুপের লোকেদের মিথ্যা সাক্ষী বানায়।
বনানীতে পুলিশ যখন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় শহীদ তখন তার লোকদের আগে থেকেই জানিয়ে দেয়। ফলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী আর গ্রেফতার হয় না। স্বার্থক হয় না পুলিশের মাদক নির্মূল অভিযান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহীদের বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে গোডাউন বস্তির বাসিন্দারা একাধিকবার বনানী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়েও চিঠি দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় শহীদকে নিয়ে একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশের পর এবং গোয়েন্দা সংস্থার মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় নাম উঠে আসার পর বনানী থানা পুলিশ বারবার বলে আসছে শহীদ তাদের সোর্স নয়। কিন্তু প্রায়ই বনানী থানা পুলিশের অভিযানে শহীদকে সরাসরি অংশ নিতে দেখা যায়। পুলিশরা সাদা পোশাকেও শহীদের সাথে একই মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। বনানী থানা পুলিশের একটি অভিযানে শহীদ উপস্থিত রয়েছে এমন একটি ছবি আমাদের হাতে এসেছে। সোর্স শহীদ বনানীতে মাদক ব্যবসার মূল হোতা হলেও রহস্য জনক কারণে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। খোঁজ খবরে উঠে এসেছে, থানার যেসব অসাধু পুলিশ কর্মকর্তারা আড়ালে থেকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের সাথে শহীদের ঘনিষ্ঠতা।