আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জের নিকটবর্তী সমুদ্রতল থেকে ৩০টিরও বেশি অজানা সামুদ্রিক প্রজাতি আবিষ্কার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মাংসাশী “ডেথ বল” স্পঞ্জ, জোম্বি ওয়ার্ম এবং এক কিশোর বিশাল স্কুইড—যা পৃথিবীর অজানা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
দক্ষিণ মহাসাগরে পরিচালিত এ অভিযানে Nippon Foundation–Nekton Ocean Census, Schmidt Ocean Institute, Universidad de Magallanes-সহ একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তারা প্রায় ২,০০০-এর বেশি জৈবিক নমুনা সংগ্রহ করে এবং এর মধ্যে ৩০টিরও বেশি প্রজাতিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে নতুন হিসেবে চিহ্নিত করে।
গবেষণার সবচেয়ে আকর্ষণীয় আবিষ্কারগুলোর একটি হলো মাংসাশী “ডেথ বল” স্পঞ্জ। সাধারণ স্পঞ্জ যেখানে পানি ছেঁকে খাবার গ্রহণ করে, সেখানে এই নতুন প্রজাতিটি ক্ষুদ্র হুক ব্যবহার করে শিকার ধরে খায়—যা বিজ্ঞানীদের জন্যও বিস্ময়কর।
এছাড়া পাওয়া গেছে রহস্যময় “জোম্বি ওয়ার্ম”—যাদের মুখ নেই, দাঁত নেই। এরা বড় প্রাণীর হাড়ে থাকা চর্বি ভেঙে খেতে সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। আবিষ্কৃত অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে রয়েছে উজ্জ্বল স্কেল কৃমি, কালো প্রবাল এবং নতুন ধরনের সি-স্টার।
সবচেয়ে আলোচিত দৃশ্য ছিল একটি কিশোর colossal squid-এর ভিডিও ধারণ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই প্রজাতিটি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় দৈর্ঘ্যে ৪৫ ফুটেরও বেশি এবং ওজনে হাজার পাউন্ডের বেশি হতে পারে—যা সমুদ্র জীববিজ্ঞানে একটি বিরল ডকুমেন্টেশন।
দলটি দক্ষিণ স্যান্ডউইচ ট্রেঞ্চ, সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরির ক্যালডেরা এবং গভীর সমুদ্রের বিভিন্ন বাসস্থান অনুসন্ধান করে। পৃথিবীর গভীর সমুদ্রের ৯৯% এরও বেশি এখনও অনাবিষ্কৃত হওয়ায় এসব আবিষ্কার সামুদ্রিক গবেষণায় বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গবেষকদের মতে, এই নতুন প্রজাতিগুলো পৃথিবীর চরম পরিবেশে জীবনের অভিযোজন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানব কার্যক্রমের প্রভাবে যখন সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান হুমকির মুখে, তখন এই আবিষ্কার ভবিষ্যৎ সংরক্ষণ কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে। সংগৃহীত নমুনা ও প্রজাতি শনাক্তকরণের কাজ আরও কয়েক বছর ধরে চলবে।