নড়াইল পৌরসভার ধোপাখোলা গ্রামের একটি হিন্দু পরিবারের বসতবাড়িসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছপালা কেটে জোরপূর্বক দখল নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানাগেছে এলাকার ভূমিদস্যু হিসেবে খ্যাত ভওয়াখালি গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহর নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে । ঘটনার পাচদিন অতিবাহিত হলেও আতঙ্ক কাটছে না ভুক্তভোগী পরিবারের। অভিযুক্ত মোহাম্মদ উল্লাহকে গ্রেফতার করতেও পারেনি পুলিশ।
এলাকাবাসি ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা জানান,সবেমাত্র ভোর হয়েছে । যার যার কাজ-কর্মে বের হবার জন্য গ্রামের মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছে । এমন সময় পৌরসভার ভওয়াখালী গ্রামের ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ উল্লাহর (৪৫) নেতৃত্বে গ্রামের দুলাল বিশ্বাসের বাড়ীতে প্রবেশ করে । কিছু বুঝে ওঠার আগেই নারকেল, পেয়ারা, সুপারি, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ কাটতে শুরু করে । এ সময় একটি ঘরও ভেঙ্গে নিয়ে যায়। এ কাজে অংশ নেয় ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষ। প্রত্যেকের হাতে ছিল দা,কুড়াল ছাড়াও ইলেকট্রিক করাত । বৃদ্ধ দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বাধা দিতে গেলে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অভিযুক্ত ও তার লোকজন পালিয়ে যায়।গত ১০ অক্টোবর এই ঘটনা ঘটে ।
দুলাল বিশ্বাস বলেন,আমার বসতবাড়ির সাড়ে ১১ শতক জমিসহ বাড়ি পাশে জমি ও পুকুর রয়েছে । এছাড়া প্রতিবেশি মান্নান ও নাসিমার জমি এবং রূপগঞ্জ বাজারের অলোক কুন্ডুর জমিসহ এক একরের বেশি জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছি। মোহাম্মদ উল্লাহ আমাদের বাপ-দাদার বসতভিটা ও জমি থেকে উচ্ছেদ করতে চাচ্ছেন। ছেলে-মেয়ে, বউ, বেটার বউ, নাতি-পুতা নিয়ে এই বসতভিটায় আমরা বসবাস করতে চাই। আমরা বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে যাবো কোথায় ? বসতভিটা রক্ষায় আমরা প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা চাই।
দখলকৃত জমির আরেক মালিক নড়াইলের রূপগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী অলোক কুন্ডু বলেন, আমি ধোপাখোলা এলাকার বাসিন্দা তপন বিশ্বাসের কাছ থেকে সাড়ে ৪২ শতক জমি কিনেছি। হঠাৎ করে মোহাম্মদ উল্লাহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আমার জমি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য হেমায়েতুল হক হিমু বলেন, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস ও অলোক কুন্ডুর জমি দখলের খবর শুনে ওইদিনই (১০ অক্টোবর) ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। এছাড়া ওই এলাকার সাবেক কমিশনার জামায়াতের নেতা রজিবুল ইসলামও ঘটনাস্থলে আসেন। আমাদের স্পষ্টকথা, এ ধরণের জবরদখল আমরা সমর্থন করি না। জোরপূর্বক গাছকাটা এবং বসতভিটা দখলের অপচেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা এ ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করছি।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোহাম্মদ উল্লাহ দাবি করে বলেন, আমি কারও জমি দখল করিনি। ধোপাখোলায় আমার ন্যায্য জমি বুঝে পেতে চাই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত এর আগেও মোহাম্মদ উল্লাহর বিরুদ্ধে নড়াইল পৌরসভার ধোপাখোলার বাসিন্দা আব্দুল মান্নানের বাড়ি ভাংচুর ও দখলের অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদ এবং মোহাম্মদ উল্লাহর শাস্তির দাবিতে গত বছরের ১১ জুন দুপুরে নড়াইল আদালত সড়কে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীর পরিবারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তবুও আব্দুল মান্নানের সেই জমি দখল করে নিয়েছে মোহাম্মদ উল্লাহ। এখন আশেপাশের জমিও দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে মোহাম্মদ উল্লাহ। এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।