বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর দর্শকের উচ্ছ্বাসে মুখর ঢাকার নবাবগঞ্জের ইছামতি নদীর কলাকোপায়। হৈ হুল্লোড় আর বুলির তালে তালে এ যেন একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। ‘হেইয়ো হেইয়ো হেইয়ো/সামাল সামাল সামাল ধরে/ সামনে তরী বাইয়ো/হেইয়ো হেইয়ো/বেলা গেল সন্ধ্যা হইল/কালো মেঘে গগন খাইলো হৈ/থাইকা থাইকা গর্জে দেয়া/ তীরের পান ধাইয়ো’। গানের তালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৈঠা টানছে মাঝিরা। যার ফলে কারও বৈঠা ঠোকাঠুকি না-লেগে এক সঙ্গে পানিতে অভিঘাত সৃষ্টি করছে। ঢেউয়ের দুলুনির মধেই পানি কেটে কেটে ছিপছিপে দীঘল নৌকাগুলোর ছুটে চলছে। কে কাকে পেছনে ফেলবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা।” আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে রোববার বিকেলে উপজেলার কলাকোপা এলাকায় ইছামতি নদীতে এ নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়।
এদিকে, উৎসবমুখর পরিবেশে এ নৌকা বাইচ উপভোগ করতে ইছামতির দুই তীরে হাজার হাজার দর্শনার্থী জড়ো হন। তারা তীরবর্তী ভবনের ছাদ, বিভিন্ন ঘাট এবং নৌযানের ওপর বসে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। বাইচে ৭টি ঘাসি নৌকা অংশগ্রহণ করেন। নৌকাগুলো হলো খান বাড়ি, শিকদার বাড়ি, শেখ বাড়ি, শেখ আব্দুল খালেক, লিটন-১, লিটন-২, সোনার তরী ও দাদা নাতী মোহন মন্ডল।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা সত্তরোর্ধ শফিউদ্দিন বলেন, “নৌকা বাইচ দেখতি আমি দুপুর ২টায় মধ্যি ইছামতি নদীর পাড়ে আইছি। বাইচ দেইখে খুব আনন্দ পাইছি।”
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন , নানা কারনে এখন ইছামতি নদীতে নৌকা বাইচ হয় না। এর মধ্যে অন্যতম কারনে বেড়িবাঁধে ¯øুইস গেট না থাকায় পানির স্বল্পতা ও কচুরি পানা। কলাকোপা এ্র এমন আয়োজন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।
কলাকোপা নৌ বাইচ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহীম খলিল বলেন, আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এমন আয়োজন। যদি সকলের সহযোগিতা পাই তাহলে প্রতিবছরই এমন আয়োজন করা হবে।
নৌকা বাইচ শেষে বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জকারী বাইচ দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার ১টি মোটর সাইকেল, দ্বিতীয় পুরস্কার ১৮ সেফটি ফ্রিজ ও তৃতীয় পুরস্কার ছিল ১২ সেফটি ফ্রিজ। এছাড়া অংশগ্রহণকারী সকল নৌকার জন্য রয়েছে একটি করে এল.ই.ডি টিভি।