চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে চানচল্যকর ভ্যানচালক রাজুর হত্যাকারী ও তার দু’সহযোগিকে আটক করেছে জেলা ডিবি পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ৯টায় এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ডিবি কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্স করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডিবি অফিসসূত্রে জানাগেছে, গত ২২ জুন নাচোল পৌর এলাকার শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত আঃ মোত্তালেবের ছেলে রাজু আহম্মেদ আটোভ্যান নিয়ে প্রতিদিনের ন্যায় ভাড়ায় চালানোর জন্য বের হয়। একই তারিখ রাতে বাড়ী ফিরে না আসলে ভ্যানের প্রকৃত মালিক ছফর আলী যোগাযোগ করলে রাজু জানায়, সে কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ী চলে আসবে। কিন্তু সে বাড়ী ফিরে আসেনি। পরদিন সকাল অনুমান ৮টায় লোকমূখে শুনতে পায় নাচোল থানাধীন পারিলা গ্রামের মিরকাডাঙ্গাগামী ইট বিছানো রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে জনৈক কুদ্দুস আলীর আম বাগানের পার্শ্বে একজন ব্যক্তির গলা কাটা মৃত দেহ পড়ে আছে। এমন সংবাদ পেয়ে রাজুর মা ও ভ্যানের মালিক ছফরকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ছেলে রাজুর মৃত দেহ শনাক্ত করে।
ওই ঘটনায় নাচোল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। মামলার অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা শাখা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাচোল থানা যৌথভাবে জোর তৎপরতা শুরু করে। যৌথ টিমের অফিসার ও ফোর্সের সম্মিলিত একটি চৌকস টিম বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৬ জুন ভোর বেলার দিকে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানা হতে উক্ত হত্যা মামলায় কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী আসামী খাদেমুল ইসলাম ওরফে মধু (২৪), পিতা-মোঃ তরিকুল ইসলাম ওরফে ভ্যালেন, সাং-উত্তর সিংঙ্গেরগাড়ী (তেলমনপাড়া), থানা-কিশোরগঞ্জ, জেলা-নীলফামারীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় সে প্রায় ৪ (চার) মাস আগে নাচোল রেল স্টেশন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। একই এলাকায় মৃত রাজু ও বসবাস করায় তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। একসময় আসামী খাদেমুল মৃত রাজুর ভাড়ায় চালিত অটোভ্যানটি নেওয়ার জন্য রাজুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পলিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন অর্থাৎ ২২ জুন বিকাল অনুমান ৪টায় রাজুকে চুয়ানি খাওয়ানোর কথা বলে দুইজনই একসাথে ভ্যান নিয়ে বের হয়। সন্ধ্যার পর চুয়ানি সংগ্রহ করে রাজুকে মাত্রাতিরিক্ত চুয়ানি খাওয়ায়, ফলে রাজু ভ্যানে শুয়ে পড়ে আর আসামী খাদেমুল নিজেই ভ্যান চালাতে থাকে। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে আসামী খাদেমুল সুযোগ বুঝে তার কোমড়ে থাকা মৌচাক কাটা ধারালো চাকু দিয়ে ভ্যানে শুয়ে থাকা রাজুর গলা কেটে এবং পিঠে ঐ চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। লাশ রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত চাকুটি (যা পরের দিন উদ্ধার হয়) লাশের পাশেই ফেলে দিয়ে ভ্যানে থাকা ন্যাকড়া দিয়ে ভ্যানের রক্ত মুছে ভ্যানটি নিয়ে মিরকাডাঙ্গা গ্রামের দিকে যেতে থাকে। ওই রাতে আসামী খাদেমুল মল্লিকপুর, গোমস্তাপুর ও চাঁনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানটি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে। রাত শেষ হলে সকাল সাড়ে ৮টার সময় আসামী খাদেমুল তার পূর্ব পরিচিত ভ্যানের মেকার ২নং আসামী আমিনুর রহমান (২২), আমানত আলী ও ৩নং আসামী আমানত আলী, পিতা-মোঃ রমজান আলী, উভয় উভয় সাং-ফতেপুর মসজিদপাড়া, থানা-নাচোল, জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ দ্বয়ের নিকট ২০ হাজর টাকা দাম করে নগদ ১৪ হাজার টাকা নিয়ে ভ্যানটি বিক্রয় করে। বাকী ৬ হাজার টাকা বিকাশে নিবে বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী বাজারে অবস্থান করে পরের দিন সকালে বিআরটিসি বাসে নিজ বাড়ী নিলফামারীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামী খাদেমুলের দেওয়া তথ্য মতে ২ ও ৩ নং আসামীর বসতবাড়ীর আঙ্গিনা হতে মৃত রাজু আহাম্মেদ এর ভাড়ায় চালিত অটো ভ্যানটি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। চাঞ্চল্যকর রাজু হত্যা মামলার আসামীদেরকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডিবি পুলিশ বিভিন্ন সময় আটক করলেও গত ২৭ জুন রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডিবি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি।