একটি পক্ষ গ্রাম ছাড়া। বাড়ীতে বসবাস করার মত কেউ নেই। না আছে নারী, না আছে শিশু। আর পুরুষ তো মামলা হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে এমনটাই দেখা গেছে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের বুধুরিয়া ডাংগাপাড়া গ্রামে। সম্প্রতি গত ১০ এপ্রিল সামান্য গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী দুটি পক্ষ হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুইজন মারা যায়। এ নিয়ে নিহত শরিফুল ইসলামের স্ত্রী সাহনাজ বিবি বাদী হয়ে থানায় নামধারী ৬১ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। মামলার আসামীরা এখন গ্রাম ছাড়া। তাদের বাড়ী ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছে প্রতিক্ষরা, বাড়ীঘর ভাংচুর করেছে, গ্রাম আসতে বাধা, আসলে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ পালাতক আসামী ও আসামীর আত্মীয় স্বজনদের।
বুধুরিয়া ডাংগাপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী সাবিনা অভিযোগ করে বলেন, আমি ও আমার পরিবার গ্রাম ছাড়া। গ্রামে ঢুকতে পারছি না। গেলেই নাকি তারা আমাদের মেরে ফেলবে। আমার বাড়ীর জিনিসপত্র সব কিছু নাকি তারা লুট করে নিয়ে গেছে। পুকুরের মাছ, ঘরের মধ্যে রাখা ফ্রিজসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। আমাদের ধানের কোন পরিচর্যা করতে দেয়নি। ধান নাকি তারা কাটতে দিবে না। তারাই জোর করে আমাদের ধান কেটে নিবে। আমরা আতংকে আছি। আমরা তো সেই দিন কিছুই করিনি। তারপরেও আবার স্বামীকে আসামী করেছে। আমরা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আছি।
বৃদ্ধা আলেয়া বলেন, আমরাও প্রাণ ভয়ে গ্রাম ছাড়া। গ্রামে ভয়ে যেতে পারছি না। গেলেই তারা মেরে ফেলবে। আমাদের বাড়ীর জিনিসপত্র নাকি কেছুই নেই। সব কিছু তারা নিয়ে গেছে। যারা দোষ করেছে তাদের বিচার হোক আমিও চাই। কিন্তু যারা আমরা কোন দোষ করিনি তাদের কেন হুমকি দিচ্ছে। আমাদের কেন প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে?
তোতা মিয়ার স্ত্রী আলিফ নুর বলেন, আমরা বাড়ীতে যেতে পারছি না। গেলেই মেরে ফেলবে। অথচ যেদিন ঘটনা ঘটে সেই দিন ঐ সময়ে আমি গ্রামেই ছিলাম না। চিৎিসার জন্য মহাদেবপুর গিয়েছিলাম। মারামারির সংবাদ পেয়ে গ্রামে আসার পথে গ্রামে কাছে আমাকে ঘরে ফেলে। অন্যায়ভাবে আমাকে থানায় নিয়ে যায় এবং আসামী করে। জামিন নিয়ে এখন প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ঐ পক্ষের লোকেরা হুমকি দিচ্ছে গ্রামে গেলেই মেরে ফেলবে। সরকারের কাছে দাবী গ্রামে সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। যারা দোষী তাদের বিচার হোক।
গ্রামের বাসিন্দা শাহিন আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, গ্রামের পরিবেশ এখন শান্ত। সবাই আতংকে রয়েছে। তবে বাড়ী ঘরে কোন লুটপাট হয়নি। পুলিশ আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে। লুটপাটের যে অভিযোগ তা মিথ্যে।
আরেক গ্রামবাসী সেলিম হোসেন হোসেন, আমার পরিবার আতংকে রয়েছে। তবে কেউ কোন প্রকার ভয়ভীতি দেখাই নি। পুলিশ সব রকমের সহযোগিতা করছে।
মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা সহকারী পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল ইসলাম বলেন, গ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। আসামীদের গবাদিপশু তাদের আত্মীয় স্বজনদের হাতে দেওয়া হয়েছে। বাড়ী ঘর সব কিছু সুরক্ষিত রয়েছে। বাড়ী ঘরে লুটপাটের কোন অভিযোগ পাওয়া যায় নাই। আমরা প্রতি নিয়ত টহল দিচ্ছে। সে রকম কোন কিছু ঞয় নাই। তাদের অভিযোগ মিথ্যে। আর সবাই তো আসামী না । বিশেষ করে বাড়ীর মহিলারা বাড়ীতে অবস্থান করতে পারে। যদি কেউ হুমকি ধুমকি দেয তাহলে আমাদের অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিব। ধান কাটার মৌসুম আসছে। আমরা সেই ধান কাটার ব্যবস্থা করে দিবো। আমার জানা মতে বাড়ী ঘরের কোন জিনিসপত্রে অন্য পক্ষের কেউ হাত দেয় নি। কেউ লুটপাট করেনি।