নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের সাবেক উপপ্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরন ও ত্যাগী নির্যাতিত নেতাকর্মীদের  দূরে সরিয়ে রাখতেন। গুটি কয়েক নেতাকর্মী  তিনি নিয়ে চলাফেলা করতেন যাদের বিরুদ্ধে আছে নানা অভিযোগ। এছাড়াও বিগত ইউপি নির্বাচনে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে সুযোগসন্ধ্যানীদের নমিনেশন এর ব্যাপারে সাহায্য করেন।

নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক ও জেলা রির্টানিং অফিসার শাহেদ পারভেজ জানান,  ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু ৭৬ হাজার ৮০৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার  নিকটতম  নৌকার প্রার্থী অসীম কুমার পান ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোট।  নৌকার চেয়ে ভোটের ব্যবধান ছিল ২ হাজার ২৫৩ ভোট।

নেত্রকোনা-৩ আসনে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন তন্মধ্যে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুর কাদের কোরাইশী ৫ হাজার ৪৬০ ভোট পান।  অর্থাৎ ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫১৩ ভোটারের মধ্যে মোট ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯০ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ভোটারের হার ৪০.৪৩ শতাংশ।

এলাকার নেতাকর্মীরা জানান, অসীম কুমার উকিল সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই দলীয় কোন্দল বাড়তে শুরু করে। কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে দলীয় কোন্দল তীব্র হয়। কমিটিতে ত্যাগী এবং প্রবীণ নেতাদের মাইনাস করার মাধ্যমে দুর্বল হয়ে যায় কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। কেন্দুয়া উপজেলাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ সম্পাদক এবং মেয়র আসাদুল হক ভূঁইয়ার।

নেত্রকোনা-৩ আসনের নির্বাচনের নৌকার প্রার্থী অসীম কুমার উকিল এবং ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু হলেও মূলত স্নায়ুযুদ্ধ চলে ত্যাগী এবং প্রবীণ নারী নেত্রী সালমা আক্তার এবং মেয়র আসাদুল হক ভূইয়ার মধ্যে। একদিকে দুর্বল কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ অন্যদিকে পদ বঞ্চিত ত্যাগী নেতারা। সালমা আক্তার ছিলেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক। তিনি কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, নেত্রকোনা জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান, কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা, সমাজ উন্নয়ন ক্যাটাগরীতে বিভাগীয় জয়িতা পদক জয়ী এবং ১৯৯৭ সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত থেকে বৃক্ষ রোপনে পদক প্রাপ্তি সহ জাতীয় পর্যায়ে আরো অনেক পদক প্রাপ্তির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। এত যোগ্যতা থাকার পরেও সালমা আক্তারের স্থান হয়নি নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এমনকি কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও স্থান হয়নি।

অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নারীদের অবস্থান দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নারী হিসেবে একমাত্র সভাপতির কণ্যার স্থান হয়েছে। কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের ভাই, ভাগ্নের স্থান হলেও হয়নি দুই বারের নির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন ভূইয়াসহ আরো অনেক ত্যাগী নেতাদের। সর্বপরি কমিটি ছাড়াও বলাইশিমুল শতবর্ষী খেলার মাঠে আশ্রয়ন প্রকল্প নিয়ে বিরোধ, বেতাই নদীতে খাল খননের প্রকল্প সহ কেন্দুয়ার সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলী সংক্রান্ত বিষয়ে নেগেটিভ তদবীরসহ কর্মকর্তাদের বিষয়ে অসংলগ্ন কথাবার্তা, বিভিন্ন চাকরীর জন্য তদবীর বাণিজ্য এবং কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কমিটি তে পদ বাণিজ্য সহ অসংখ্য অভিযোগ অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল এবং আসাদুল হক ভূইয়ার বিরুদ্ধে। এরই প্রতিবাদ স্বরূপ সালমা আক্তারের নেতৃত্বে ট্রাক প্রতীকের বিজয়।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর বিজয় লাভ করা সহজ হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, অসীম কুমার উকিল কেন্দ্রীয়ভাবে একজন বড়মাপের নেতা ও তিনি বিদ্যান ব্যক্তি। কিন্তু তৃণমূল মানুষের সঙ্গে তিনি সহজে মিশতেন না। এমপি থাকাকালীন স্থানীয়দের সঙ্গে সীমিত যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি সময় পেলে এলাকায় আসতেন ঠিকই কিন্তু সাধারণ মানুষের সাথে দেখা করতেন না। কেন্দুয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আসাদুল হক ভূঁইয়াসহ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে তিনি থাকতেন। যার ফলে অনেক ভোটারই ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে ভোট দেননি।