দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটলেও ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এখনো সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনকালীন সময়ে নৌকার পক্ষে কাজ করায় আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের হাবিব শেখ নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে-পিটিয়ে মারাত্মক জখম করার অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রলীগ কর্মীর বাবা তারা শেখ বাদি হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ শরিফুল ইসলামসহ ৯জনকে আসামি করে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থানায় মামলা করেছেন। মামলায় আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আজকে পর্যন্ত মামলার কোন আসামিকে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ওসি ওসি মো. সেলিম রেজা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান এর (তৃতীয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং বর্তমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী) পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে হাবিব শেখ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। বিষয়টি নিয়ে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলনের সমর্থক বিদ্যাধর গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ শরিফুল ইসলামের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় হাবিবের। দ্বন্দ্বের জেরে গত রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় স্থানীয় মহিষারঘোপ বাজারে যাওয়ার পথে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগ কর্মী হাবিব শেখের (২১) ওপর ইউপি সদস্য সৈয়দ শরিফুল ইসলাম ওরফে সরফেজ মেম্বারের হুকুমে দেশি অস্ত্রসহ লাঠিসোটা নিয়ে ৮/১০জন হামলা করে। হামলায় আরো অংশ নেয় সৈয়দ জাকের আলী, সৈয়দ আজিবুর আলী, সৈয়দ ইকলাজ আলী, আজিজুর মোল্লা, ইসমাইল মোল্লা, অপু মোল্লা ছাড়াও আরো অজ্ঞাতনামারা। এ সময় হাবিবকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় ওই ছাত্রলীগ কর্মীর বাবা তারা শেখ বাদি হয়ে মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ শরিফুল ইসলামসহ ৯ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। যার মামলা নম্বর-০৩। মামলায় আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলার কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
হামলায় আহত হাবিব শেখের মেঝ ভাই উজ্জ্বল শেখ জানান, মহিষারঘোপ বাজারে হাবিব ওইদিন সন্ধ্যায় একাই যাচ্ছিল। নৌকার নির্বাচন করায় পূর্ব থেকেই আসামিরা বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিচ্ছিল আমাদের। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ৫ নম্বর আসামি আজিজুরের বাড়ির সামনে গেলেই হাবিবকে ঘিরে ফেলে। এ সময় শরিফুল মেম্বার লোকজনকে হুকুম দিয়ে বলে; ‘আজ ওকে নৌকার নির্বাচন করার সাধ মিটিয়ে দে, যত টাকা লাগে আমি দিব কোর্ট কাচারী আমি সামলাবো‘। বলা মাত্রই আসামিরা লোহার রড, রামদা দিয়ে আমার ভাইকে মেরে মারাত্মক জখম করে। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য সৈয়দ শরিফুল ইসলাম জানান, আমি ঘটনার দিন বাড়ি ছিলাম না। মাকে নিয়ে নড়াইলে ছিলাম, পরের দিন সকালে এসেছি। গ্রামে গ্রুপিংয়ের কারণে আমাকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার ওসি মো. সেলিম রেজা জানান, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকার পরিবেশ শান্ত করে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে।