গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (LGED) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হেলালুর রহমান হেলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে-তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে নিজেই ‘ঠিকাদার’ হিসেবে কাজ করছেন!
বিষয়টি শুধু এলজিইডির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বা সরকারি বিধি-বিধান নয়, বরং পুরো সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস যোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।
সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে পলাশবাড়ী পৌর শহরের পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। উক্ত নির্মাণকাজে নির্ধারিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকার কথা থাকলেও স্থানীয়দের অভিযোগ—কাজের শুরু থেকেই তা নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন উপসহকারী প্রকৌশলী হেলাল।
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি মোহাব্বত হোসেন বলেন, “প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় আমরা (এলাকাবাসী)ঠিকাদারকে ডাকার অনুরোধ করি। কিন্তু উপসহকারী প্রকৌশলী হেলাল সাহেব সাফ জানিয়ে দেন—ঠিকাদার আসবে না, আমি নিজেই এই কাজের ঠিকাদার!”
এদিকে নির্মাণকাজে প্রাক্কলন অনুযায়ী উচ্চমানের ইট, পাথর, বালি ও সিমেন্ট ব্যবহার করার কথা থাকলেও কাজের শুরু থাকেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে হেলাল এ অনিয়মে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না পাওয়ায় হতাশ স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী একাধিক রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় উপসহকারি প্রকৌশলী হেলাল বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে কখনো ভয়ভীতি আবার কখনো রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
পলাশবাড়ী এলজিইডি অফিসে দীর্ঘদিন উপসহকারি প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকায় এই হেলালের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প,উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্প,
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলা সমূহের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পে
ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিল ছাড়ের সময় শতকরা ৫% থেকে ১০% পর্যন্ত “কমিশন” গ্রহণ করেন, এছাড়াও দরপত্র জালিয়াতি, অতিরিক্ত বিল অনুমোদন, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়া, এমনকি ঠিকাদারের সাথে কাজের ভাগাভাগির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডি’র এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রকৌশলী যখন নিজেই ঠিকাদার, তখন নিরপেক্ষতা ও কাজের মান-দুটোই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”
এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদুল করিম সরকার বলেন, “উপসহকারী প্রকৌশলী এমনটি করতে পারেন না। আমি নিজেই এলাকা পরিদর্শন করবো এবং অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান দোলন বলেন, “নির্মাণকাজের মান নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন রয়েছে। বিষয়টি একাধিকবার উপসহকারী প্রকৌশলী হেলাল সাহেবকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা তিনি নেননি।”
এ বিষয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী হেলালুর রহমান হেলালের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ-একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন থাকায় প্রভাবশালী একাধিক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থেকে হেলাল একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। এতে করে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবর্তে এখানে ‘অনিয়মই, নিয়মে পরিনত হয়েছে, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে পলাশবাড়ীর সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা উপসহকারী প্রকৌশলী মো.হেলালুর রহমান হেলাল এর বিরুদ্ধে এ সকল অনিয়ম ও দূর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।