গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকট আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চিকিৎসা নিতে এসে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান ও পরিবেশ দুই-ই তলানিতে। বেডে কুকুর, দুর্গন্ধযুক্ত টয়লেট, অপরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড, মানহীন খাবার—সব মিলিয়ে এ যেন এক মৃত্যু ফাঁদ!
৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। অথচ ২৯টি চিকিৎসক পদের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট আরও তীব্র—অর্থোপেডিকস, শিশু ও নাক-কান-গলা (ENT) বিভাগে নেই কোন বিশেষজ্ঞ। এতে রোগীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, প্রায় সময়ই চিকিৎসা নিতে এসে রাগান্বিত স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাকবিতণ্ডা, এমনকি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে ঢুকলেই দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। ওয়ার্ডের বেডে কুকুর ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। ব্যবহৃত চাদর-বালিশও দীর্ঘদিন ধোয়া হয় না। টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য—জমে থাকা ময়লা ও দুর্গন্ধে পরিস্থিতি ভয়াবহ। পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও ওয়ার্ড বয়ের সংকটের কারণে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধিও মানা সম্ভব হচ্ছে না।
আজাদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে এসে বলেন, “বেডে কুকুর, টয়লেটের অবস্থাও ভয়াবহ। দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। কীভাবে রোগী রাখব?”
হাসপাতালের খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। বেশিরভাগ রোগী বলেন, খাবারে নিম্নমানের চাল- ডাল-সবজি ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় নির্ধারিত খাবার যথাসময়ে সরবরাহ হয় না, আবার কিছু রোগীকে খাবার না দিয়ে চলে যাওয়া হয়।
পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সালাহউদ্দিন বলেন,
“কম জনবল নিয়েও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। দীর্ঘদিন ধরে চাহিদা পাঠানো হলেও এখনো কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি।”
গাইবান্ধা জেলা সিভিল সার্জন ডা. রফিকুজ্জামান জানান,
“জেলার অনেক হাসপাতালেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। আমরা ডিজি অফিসে চাহিদাপত্র পাঠিয়ে যাচ্ছি। তবে যাঁরা যোগ দেন, তারা দীর্ঘদিন থাকেন না।”
এই হাসপাতাল কেবল পলাশবাড়ী নয়, আশপাশের, সাদুল্লাপুর, গোবিন্দগঞ্জ ও পীরগঞ্জ এলাকার মানুষও এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। রোগীর চাপ অনেক বেশি, কিন্তু চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে কম।
স্থানীয় জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম দৈনিক খবরবাড়ী ডটকম-এর সম্পাদক মোশফিকুর রহমান মিল্টন বলেন,
“স্বাস্থ্য খাতে এমন অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে মানুষের বিশ্বাস হারিয়ে যাবে। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক ও কর্মচারী নিয়োগসহ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও খাবার ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে পলাশবাড়ী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।”
পলাশবাড়ীর বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন গুলো অবিলম্বে হাসপাতালের শূন্য পদে নিয়োগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন, টয়লেট সংস্কার, খাবারের মান উন্নয়ন ও সার্বিক অবকাঠামো সংস্কারের জোর দাবি জানিয়েছে অন্যথায় মানববন্ধনের মত কর্মসূচি দেবে বলে জানিয়েছে।