প্রারম্ভিকা
আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নে নিজের মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে আলোচিত রহিম (৪৫) অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। সংবাদ প্রকাশের পর জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হলে এবং একাধিক অভিযোগ ওঠার পর পাঁচ দিন পর শনিবার সকালে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে ভুক্তভোগী কিশোরী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ই সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের মৃত আব্দুল সোবাহানের ছেলে রহিম নিজ বাসায় মেয়ের রুমে প্রবেশ করেন।
এসময় দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক নিজের ১৭ বছরের ছোট মেয়েকে খাটে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। ভিকটিমের সংবেদনশীল অঙ্গে হাত দিয়ে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করলে মেয়েটি আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার দেয়।
ঘটনার পরদিন বড় মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে ডেকে এনে বিষয়টি জানালে অভিযুক্ত রহিম ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে মারধর করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে ১৯শে সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৫ মিনিটে আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
এরপর পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পায় এবং শনিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বিশেষ অভিযানে রহিমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।
আশুলিয়া থানার এসআই ও স্মৃতিসৌধ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান জানান—
“ভিকটিমের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত রহিমকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিম বর্তমানে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন।”
গত ২০শে সেপ্টেম্বর “আশুলিয়ায় মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে বাবার বিরুদ্ধে মামলা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। এরপর রহিমের বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ উঠে আসে। জনমনে চাপ ও ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে অবশেষে ৫ দিন পর পুলিশ রহিমকে গ্রেপ্তার করে।
ভিকটিমের বড় মেয়ে বলেন—
“আমাদের ছোট বোনের সঙ্গে জঘন্য কাজ করার পর আমরা প্রতিবাদ করি। তখন বাবা আমাদেরকেও মারধর করে এবং হুমকি দেয়। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
ভিকটিমের মা বলেন—
“আমি দোকানে গেলে এ ঘটনা ঘটে। পরে মেয়ের কাছে সব শুনে আমি সঙ্গে সঙ্গে থানায় অভিযোগ করি। এখন আমি চাই, যেন এর সঠিক বিচার হয়।”
গ্রেপ্তারের সময় রহিম সাংবাদিকদের সামনে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অপরাধ অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন—
“রহিমের বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলত না। অবশেষে মেয়ে নিজেই ঘটনার শিকার হয়ে সব প্রকাশ করল। আমরা চাই, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।”
সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) বলেন—
“এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ সমাজে আর বরদাস্ত করা হবে না। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি এবং ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।”
পাথালিয়ায় বাবার হাতে মেয়ের ওপর ধর্ষণচেষ্টার মতো জঘন্য ঘটনা আলোচনার ঝড় তুলেছে। সংবাদ প্রকাশের পর রহিমের গ্রেপ্তার জনমনে স্বস্তি আনলেও ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করাই এখন সবার প্রত্যাশা।