জেলা রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা এবং নারী লালসাসহ একাধিক অভিযোগ এনে তাকে অপসারণের দাবিতে পাবনায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি প্রদান করেছে ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পাবনা জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে ‘ভুক্তভোগী দলিল দাতা ও গ্রহীতাগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসক অনুপস্থিত থাকায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমের হাতে একটি দুই পৃষ্ঠার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, জেলা রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ বাণিজ্য, হয়রানি ও অসদাচরণের মাধ্যমে পাবনা জেলার সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে প্রতি দলিল রেজিস্ট্রির বিপরীতে গড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করা হয়, যা না দিলে দলিল বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে প্রতি মাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা করে অনিয়মিত অর্থ আদায় করা হয় এবং এসব কার্যক্রম জেলা রেজিস্ট্রারের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তিনি প্রতি মাসে মাত্র দুই থেকে তিন দিন অফিস করেন। বাকী সময় ‘ছুটিতে আছেন’—এমনটাই জানান কর্মকর্তারা। এর ফলে জরুরি দলিল কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় এবং সাধারণ জনগণ মারাত্মক হয়রানির শিকার হন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক নারী জানান, “আমি জমির দলিল রেজিস্ট্রির জন্য গেলে দ্বীপক আমাকে বলেন—‘টাকা লাগবে না, তুমি শুধু আমার সাথে একটু গল্প করো।’ আমি কেন একজন সরকারি কর্মকর্তার বাসায় গিয়ে গল্প করবো?”
অন্য এক দলিল দাতা বলেন, “রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে দলিল রেজিস্ট্রির আগে গোপনে টাকা দিতে হয়। না দিলে কাজ আটকে দেওয়া হয় বা বাতিলের ভয় দেখানো হয়।”
মানববন্ধনে ‘এক দুই তিন চার, দ্বীপক তুই গদি ছাড়’, ‘দফা এক দাবি এক—দ্বীপকের পদত্যাগ’, ‘দ্বীপকের দুই গালে—জুতা মারো তালে তালে’ এমন নানা স্লোগানে ক্ষোভ প্রকাশ করে অংশগ্রহণকারীরা।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকার মুঠোফোনে বলেন, “জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে সাধারণ জনগণের কোনো সরাসরি সম্পর্ক থাকে না। আমি প্রশাসনিক দায়িত্ব দেখি। আমি ছুটিতে আছি, রোববার অফিসে এসে বিস্তারিত কথা বলুন।”
স্মারকলিপির অনুলিপি জেলা প্রশাসক, নিবন্ধন পরিদপ্তর (ঢাকা), পাবনা প্রেসক্লাব এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রদান করা হয়েছে।
পাবনার সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করছেন, এই অভিযোগগুলোর দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে জনবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা সরকারের দায়িত্ব।