আজকের ব্যস্ত জীবনে সময়ের অভাবে শরীরচর্চা প্রায় উপেক্ষিত। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, সুস্থ থাকতে জিমে না গেলেও চলবে। কিন্তু প্রতিদিন হাটতে হবে ৭,০০০ স্টেপ। সম্প্রতি দ্যা ল্যানসেট পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, দিনে এই পরিমাণ হাঁটলেই মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমে যায়। এবং আরও অনেক জটিল অসুখ থেকেও দূরে থাকা সম্ভব।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এক লাখ ষাট হাজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণাটি তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন গড়ে ৭,০০০ স্টেপ হাঁটেন। তাদের মধ্যে নানান জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি অনেক কম।
দ্যা ল্যানসেট এর গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন ৭,০০০ স্টেপ হাঁটার মাধ্যমে:
– মৃত্যুঝুঁকি কমে যায় ৪৭%
– হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে ২৫%
– ক্যানসারের ঝুঁকি কমে ৬%
– টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে ১৪%
– ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমে ৩৮%
– ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদের ঝুঁকি কমে ২২%
– বয়সজনিত পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে ২৮%
আমাদের মধ্যে অনেকেই শুনে এসেছি, দিনে ১০,০০০ স্টেপ হাঁটলেই শরীর ভালো থাকে। কিন্তু এই নতুন গবেষণা বলছে, ৭,০০০ স্টেপই যথেষ্ট। এবং অনেক বেশি বাস্তবসম্মত। বিশেষ করে যারা কম সক্রিয় জীবনযাপন করেন বা বয়সজনিত কারণে বেশি হাঁটতে পারেন না, তাঁদের জন্য।
গবেষণা আরও দেখিয়েছে, ৪,০০০ স্টেপ হাঁটার মধ্যেও ইতিবাচক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে ২,০০০ স্টেপ বা তার কম হাঁটলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমার সম্ভাবনা অনেক কম।
* ক্যানসার ও ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সফলতার তথ্য পাওয়া যায়নি।
* বয়স বা শারীরিক অক্ষমতার মতো বিষয়গুলো সব সময় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তাই কিছু ফলাফলে সংখ্যাগত ত্রুটি থাকতে পারে।
তবে গবেষকেরা বলছেন, গবেষণাটিতে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ক সবচেয়ে বেশি মানুষের তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বর্তমানে প্রায় সবার হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। আপনি চাইলে, মোবাইলের স্টেপ কাউন্টার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। স্মার্টওয়াচ বা ফিটনেস ব্যান্ড দিয়েও প্রতিদিনের হাঁটা মাপা যায়। দিনে কয়েকবার হাঁটার জন্য বিরতি নিন। লিফট এড়িয়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন, হাঁটতে হাঁটতে ফোনে কথা বলুন, চাইলে অফিসে হাঁটতে হাটতে মিটিংও করতে পারেন।
এই গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সুস্থ থাকতে হলে জিমে যাওয়া বা দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই। হাঁটলেই হবে। প্রতিদিন মাত্র ৭,০০০ স্টেপ হাঁটার অভ্যাস আপনাকে দিতে পারে দীর্ঘজীবন, ভালো মন, এবং রোগমুক্ত ভবিষ্যৎ।