‘Scientific Tafsir of Quran’–এর প্রণেতা, বিশ্লেষক ও গবেষক জাকারিয়া কামাল আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি আজ ১৪ জুলাই ২০২৫, ঢাকায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন কন্যা রেখে গেছেন।
জাকারিয়া কামাল ছিলেন একজন স্বতন্ত্রমনা চিন্তাবিদ ও গবেষক, যিনি বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন, এবং রূহ-আত্মা-নফস-মন-ক্বলব, মহাবিশ্ব, কেয়ামত ও পুনরুত্থান নিয়ে বিস্ময়কর যৌক্তিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানপিপাসু শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়েছিলেন তার নির্মোহ, প্রাঞ্জল ও গভীর ব্যাখ্যায়।
প্রচলিত ধর্মীয় ব্যাখ্যাকারদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র অবস্থানে দাঁড়িয়ে জাকারিয়া কামাল ছিলেন এক অনন্য চিন্তার ধারক। তার আলোচনায় ছিলো গভীর অন্তর্দৃষ্টি, বিস্ময়কর যৌক্তিকতা এবং পরিপূর্ণ আন্তরিকতা। তিনি সব সময় ছিলেন প্রচারবিমুখ; নিভৃতে জ্ঞানচর্চায় নিবেদিত।
তিনি মনে করতেন, ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে বিরোধ নেই—বরং সঠিক উপলব্ধি ও যুক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যা থাকলে ধর্ম আরও পরিস্কার ও বোধগম্য হয়ে ওঠে। তার লেখা ও বক্তৃতাগুলোতে এই উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায়।
জাকারিয়া কামাল জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৯ সালে ঢাকায়, বাবা কামাল হোসেন ও মা হোসনে আরা বেগম–এর ঘরে। তিনি কর্মজীবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন (ইরাক-কুয়েত এবং ডিআর কঙ্গো)–এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। একজন নিরাপত্তা পেশাজীবী হয়েও তিনি জ্ঞানচর্চা, ধর্মতত্ত্ব ও বিজ্ঞানের অন্বেষণে মনোনিবেশ করেন, যা বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
তার বিখ্যাত গ্রন্থ “Scientific Tafsir of Quran” ধর্মীয় বিশ্লেষণের জগতে একটি অনন্য সংযোজন। এই গ্রন্থে তিনি আধুনিক বিজ্ঞান, কুরআনের আয়াত এবং দর্শনের আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন সৃষ্টি, জীবন, মৃত্যু, পরকাল, রূহ-আত্মা ইত্যাদি বিষয়ে।
অনুরাগীরা মনে করছেন, তার লেকচার ও গ্রন্থসমূহ ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফারসি, হিন্দিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হওয়া উচিত, যাতে সারাবিশ্বে তার চিন্তা ও বিশ্লেষণ ছড়িয়ে পড়ে। বহু মানুষ তার বক্তব্য ও ব্যাখ্যায় ধর্মীয় অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তিনির্ভর চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
তার আকস্মিক প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ধর্মীয় গবেষক, তরুণ চিন্তাবিদ ও সামাজিক মাধ্যমের অনুসারীরা। নিউজটা করে দেন।