1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শিবচরে প্রকাশ্যে হত্যা রাকিব মাদবরের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কালুখালীতে ৫০কোটি টাকার উন্নয়নের কাজ না করে ঠিকাদার নিরুদ্দেশ নারী-পুরুষের সমতা বিষয়ে সরিষাবাড়ীতে আলোচনা সভা মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে সশস্ত্র হামলার ঘটনায় জড়িত নয়ন-পিয়াস বাহিনীর অন্যতম সহযোগী গ্রেফতার মিঠাপুকুরে আমার জীবন আমার স্বপ্ন উদযাপন অনুষ্ঠান মুন্সীগঞ্জে ডিবি পুলিশ কর্তৃক মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতার ফুলবাড়ীতে পল্লি চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যু, মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকির অভিযোগ কালীগঞ্জে তৃতীয় লিঙ্গের পিংকি হসপিটালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে পুলিশকে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব,সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে -পুলিশ সুপার খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের ময়মনসিংহ ফুলপুরের ২ নং রামভদ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলন জনসমুদ্রে পরিণত

ফুলবাড়ীতে পল্লি চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যু, মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকির অভিযোগ

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৩৭ বার পড়া হয়েছে

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ভূল চিকিৎসার কারণে প্রাণ দিয়েছে শান্তনা রানী (৩৫) নামের দুই সন্তানের জননী। ০৬ (ছয়) মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সামান্য চিকিৎসার জন্য ডাকা হলো গ্রামের পাশ্ববর্তী পল্লি চিকিৎসক বাদল চন্দ্র সেনকে। কিন্তু তার দেয়া ওষুধ সেবনের পরই অকালেই ঝরে গেল দুটি জীবন —শান্তনা এবং তার গর্ভের সন্তান।

এ ঘটনায় নিহতের স্বামী রিকশাচালক বিধান চন্দ্র সেন আদালতের শরণাপন্ন হয়ে মামলা করেছেন। তবে মামলা করার পর থেকেই বাদল চন্দ্র প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং বাদীকে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ দিকে মায়ের মৃত্যুতে দিশেহারা দুই শিশু আজোয়াটারী (ছড়ারপাড়) গ্রামের ছোট্ট ঘরে এখন নিস্তব্ধতা। নয় বছরের বিপ্লবী রানী আর তিন বছরের বিপ্লব কুমার বুঝতে পারছে না কেন মা আর ফিরছে না। স্বামী বিধান চন্দ্র ঢাকায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। তিনি ঢাকা হতে ফিরে এসে পান স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ আর তড়িঘড়ি দাফন সম্পন্ন হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা। আক্ষেপের সুরে  বিধান চন্দ্র সেন জানায় যে, আমার স্ত্রীকে বাচ্চা নষ্ট করার ওষুধ দিয়েছে পল্লী চিকিৎসক বাদল। পরে আবার ক্ষমতার জোরে দ্রুত লাশ পুড়িয়েছে।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায় যে, ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর সামান্য জ্বরে আক্রান্ত হলে নিহত শান্তনার শরীর পরীক্ষা করেন পল্লী চিকিৎসক বাদল। তিনি কিছু ওষুধ দেন, তার দেয়া ওষুধ গুলোর সাথে এমএমকিট নামীয় গর্ভপাত ঘটানোর ঔষধ ছিল। সেই ঔষধ খাওয়ার পরই শান্তনার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ঐ চিকিৎসকের কাছে সাহায্য চাইলে তিনি জানান, “কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবে, হাসপাতালে নেয়ার দরকার নেই, কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে শান্তনা রাণীকে তার পরিবারের লোকজন প্রথমে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ০৭/১২/২০২৪ তারিখ মৃত সন্তান প্রসবের পর শান্তনা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বিষয়টি পল্লী চিকিৎসক জানার পর দ্রুত নিহত শান্তনা রাণীর মৃত দেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে নিহতের স্বামী রিক্সা চালক বিধান ঢাকা হতে নিজ বাড়ীতে ফেরার আগে চিতায় তুলে আগুনে পুড়ে ফেলে এবং গর্ভের মৃতু সন্তানকে অজ্ঞাত স্থানে পুতে ফেলে, যার সন্ধান অদ্যবধি পাওয়া যায়নি বলে এলাকাবাসী জানায়। নিহতের স্বামী ঢাকায় থাকায় এবং নিহতের পরিবারের লোকজন অসচেতন গরিব হওয়ায় পল্লী চিকিৎসক বাদল তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে এহেন মৃত্যুকে ধামাচাপা দেয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল কর্তৃক প্রদত্ত নিহত শান্তনার মৃত্যুর প্রমাণপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, শান্তনা রাণী গর্ভপাতের ঔষধ এমএমকিট সেবন করার ফলে মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনার পর এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে, পল্লী চিকিৎসক বাদল তার স্থানীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিহতের স্বামী বিধানকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে ফলে নিহতের স্বামী বিধান ঢাকায় চলে যায় এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের আইনী পরামর্শ নিয়ে কুড়িগ্রাম আদালতে আসে। বিষয়টি কুড়িগ্রাম আদালত পর্যন্ত গড়ালে, আদালতের নির্দেশে পল্লী চিকিৎসক বাদল এর বিরুদ্ধে ইং- ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে ফুলবাড়ী থানায় এফআইআর নং-৬, জি আর নং-৬০ ধারাঃ ৩১৪/৩০৪(ক)/৫০৬(২)৩০৭/১১৪/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ ধারায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। মামলাটি ফুলবাড়ী থানার এসআই(নিঃ)/মোঃ শাহানুর আলম তদন্তকালে অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক অজ্ঞাতস্থানে গাঁ ঢাকা দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার, কুড়িগ্রামের নির্দেশনা মোতাবেক মামলাটি গভীরভাবে তদন্ত করার জন্য কুড়িগ্রাম জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) নিকট হস্তান্তর করেন। বর্তমানে মামলাটি এসআই/খ.ম আব্দুল হালিম, জেলা গোয়েন্দা শাখার নিকট তদন্তধীন রয়েছে মর্মে নিশ্চিত করেছেন ঐ তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এদিকে মামলার অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক বাদল বর্তমানে এলাকায় প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নিহতের স্বামী বিধানকে তার দায়েরকৃত মামলা তুলে নেয়ার জন্য বার বার হুমকি প্রদান করে আসছে বলে নিহতের স্বামী রিক্সা চালক শ্রী বিধান জানায়। সে আরো জানায় যে, আমি বর্তমানে আমার নয় বছরের সন্তান বিপ্লবী রানী ও তিন বছরের বিপ্লব কুমারদ্বয়কে নিয়ে অতি কষ্টে রাস্তায় রাস্তায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছি। মামলা তুলে না নিলে, যে কোন মহুত্তে আমার দুই সন্তানের ক্ষতি করবে ঐ পল্লী চিকিৎসক বাদল।

পল্লী চিকিৎসকের দেয়া হুমকির ঘটনায় এলাকায় পূনরায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই পল্লী চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসায় শান্তনার মৃত্যু গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালী হওয়ায় পল্লী চিকিৎসক বাদল চন্দ্র এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যা ভুক্তভোগী পরিবারকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। নিহত শান্তনার প্রতিবেশী সোনালী রানী বলেন, “আমরা তো চিকিৎসকের কথাই বিশ্বাস করি। কিন্তু এমন ভূল চিকিৎসা আর হুমকি দিলে মানুষ কোথায় যাবে?

 নিহত শান্তনা রাণীর পিতা শ্রী মনিন্দ্র নাথ রায় জানায় যে, আমার মেয়ে ০৬ মাসের গর্ভ অবস্থায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পল্লী চিকিৎসক বাদলকে সংবাদ দেয়। সে এসে বাচ্চা নষ্ট করার ঔষধ খাওয়ায়। ফলে আমার মেয়ে দ্রুত অসুস্থ্য হলে, আমরা ঐ পল্লী চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করলে, সে বাড়ীতে এসে জানায় যে, কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ্য হবে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন নাই। তারপর আমার মেয়ের পেটের বাচ্চা নষ্ট করে রক্ত বের হতে থাকলে, আমরা আমার মেয়ে শান্তনা রাণীকে নাগেশ্বরী হাসপাতাল ও তারপর কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করালে সেখানে আমার মেয়ে শান্তনা রাণী মারা যায়। পরে পল্লী চিকিৎসক তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে দ্রুত লাশ বাড়ীতে নিয়ে এসে আমাদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে দ্রুত লাশ পুড়িয়ে ফেলে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও আশপাশের গ্রামে শিক্ষিত চিকিৎসক ও হাসপাতালের অভাব থাকায় অনেকেই পল্লি চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল। শান্তনার মৃত্যু সেই নির্ভরশীলতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা আবারও প্রমাণ করল। নিহতের স্বজনদের দাবি—এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে গ্রামের মানুষ আরও বিপদের মুখে পড়বে।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com