প্রকৃতির নিয়মে প্রথমেই আমরা গ্রীষ্মকে আলিঙ্গন করি। ইতোমধ্যেই গ্রীষ্ম প্রকৃতিতে তার তেজ দেখানো শুরু করে দিয়েছে। বাড়ছে গরমের তাপদাহ। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্বস্তির বৃষ্টি হলেও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এখোনা তা পরখ করেনি এই উপজেলাবাসী। তবুও প্রচন্ড গরমের অসহ্য যন্ত্রনা শরীরে থাকলেও ফুলবাড়ী উপজেলার সাধারন কৃষকদের হৃদয়ে বইছে শান্তির বৃষ্টি।
চলতি মৌসুমের বোরো ধান ঘরে তুলতে কৃষকেরা বর্তমানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। অনেক কষ্টের ফসল (বোরো ধান) নিয়ে কৃষকের মনে নেই কোন দুচিন্তা। কেননা প্রখর রোদে মাঠের ধান খুব সহজেই বাড়ীতে নিয়ে এসে মারাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলছে কৃষকেরা। ধানের সাথে সাথে খড় ও শুকিয়ে সংরক্ষন করছেন। এ উপজেলায় বেশিরভাগ কৃষক এরই মধ্যে তার কাংক্ষিত বোরো ধান ঘরে তুলেছে। আশানুরুপ ফসল ঘরে তুলতে পেরে বেজায় খুশি উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর বোরো ধান কাটার সময় ঝর বৃষ্টি সহ শিলা বৃষ্টির প্রকোপে অনেক কৃষকের ধান নষ্ট হয় কিন্তু এ মৌসুমে ধান কাটার সময় কোন বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টি, বাতাস না থাকায় ফসলের মাঠে বোরো ধানের কোন ক্ষতি হয়নি এবং ধান কাটা থেকে মারাই করে ঘরে তুলতে কোন ধরনের সমস্যা হয়নি।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে এ মৌসুমে ফুলবাড়ী উপজেলায় বোরো উপসী ও হাইব্রীড ধান চাষের লক্ষমাত্রা ১০ হাজার ১ শত ৯০ হেক্টর। ফুলবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭ শত ২০ জন কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিনামূল্যে প্রণোদনার মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। বোরো ধান চাষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতাও করা হয়েছে।
তবে কৃষকদের কষ্টের ফসল বোরো ধান বাজারে বিক্রয় করতে গিয়ে কৃষকরা দুচিন্তায় পড়তে হচ্ছে। কেননা এ মৌসুমে ডিজেল, সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উত্পাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের কৃষকরা জানায় কৃষি খাতে সবকিছুর বাড়তি দামের কারণে ধান চাষে লাভ খুব কম হয়। আর চাষ না করে জমি ফেলে রাখারও উপায় নাই। ধানের বাজার মুল্য তুলনামুলক কম হওয়ায় অনেক কৃষক ঝুকে পড়ছে ভূট্টা চাষে। গত বছর এক বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান রোপণ করতে খরচ হয়েছিল ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার বিঘাপ্রতি খরচ বেড়েছে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। সেই হিসেবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিঘাপ্রতি ১১ থেকে ১৪ শতাংশ বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। আর বর্গাচাষিদের ক্ষেত্রে খরচটা আরো বেশি। ধানের বাজার মুল্য আর একটু বেশি হলে ধান চাষে লাভবান হওয়া যেত বলে মনে করেন কৃষকরা।