ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের প্রশ্নে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো প্রকার মতবিরোধ নেই বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানীর যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আসিফ নজরুল বলেন, “আজকের আলোচনা অত্যন্ত বন্ধুসুলভ পরিবেশে হয়েছে। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল পরিষ্কারভাবে বলেছে—ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। মাঠের রাজনীতিতে একে অন্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য থাকতেই পারে, কিন্তু সেটি কখনোই তাদের পারস্পরিক রাজনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ককে অস্বীকার করে না।”
তিনি আরও বলেন, “এটা বোঝা উচিত নয় যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মতো কিছু মন্তব্য করলেই ঐক্যে ফাটল ধরেছে। বরং এই দলগুলো মাঠের ভাষা ও নীতিগত অবস্থানের পার্থক্য বজায় রেখেই একটি বড় লক্ষ্যে—ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে—একযোগে কাজ করছে।”
বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দুটি বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে জানান আসিফ নজরুল। প্রথমটি—দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে আরও কঠোর মনোভাব গ্রহণ এবং দ্বিতীয়টি—নির্বাচন প্রক্রিয়া যাতে গ্রহণযোগ্য ও সুশৃঙ্খলভাবে অগ্রসর হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে উপস্থিত দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে আপনাদের ঐক্য আরও দৃশ্যমান হলে জনগণের আস্থাও বাড়বে। একসঙ্গে থাকলে দেশের মানুষ আশাবাদী হবে এবং স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।”
আসিফ নজরুল জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা জোর দিয়ে বলেছেন, তাদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সমন্বয় বজায় রয়েছে। এক নেতা বলেন, “মাঠে যত কথাই হোক, আমরা যখনই প্রধান উপদেষ্টা আমন্ত্রণ জানান, তখনই সাড়া দেই। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় সক্রিয় অংশগ্রহণই তার প্রমাণ।”
তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক নেতারা সরকারকে সতর্ক করেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ ও উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর পুনরায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ বৈঠক স্পষ্ট করে দিল যে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও দেশের বড় দলগুলো একটি অভিন্ন লক্ষ্য—ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ ও গণতন্ত্রের পথ সুগম করার কাজে একাট্টা।