নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার বরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের ৷ অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন নিয়ে আব্দুর রউফ ও গৌর চন্দ্র মাহাতো নামের দুই শিক্ষকের মধ্যে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব । এতে দুই দলে বিভক্তি হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীরা । আর এতেই খেসারত দিচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা । এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এর কক্ষে তালা দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে । গত মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখে সরেজমিনে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিসে তালা । উৎসুক এলাকাবাসী তারা জানালেন, এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন ২০২০ সালের দিকে অবসরে যাওয়ার পর জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষক গৌর চন্দ্র মাহাতো শিক্ষা অধিদপ্তরের বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছে । কিন্তু আওয়ামীলীগ আমলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শ্যামল দত্তের যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আব্দুর রউফকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে মামলা করে বসেন শিক্ষক গৌর চন্দ্র মাহাতো । এদিকে ৫ আগষ্টের পর আব্দুর রউফ প্রধান শিক্ষকের পদে থেকে পদত্যাগ করলে গৌর চন্দ্র মাহাতোকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার সম্মতি প্রদান করেন পত্নিতলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও স্থানীয় চেয়ারম্যান সহ এলাকার গনমান্য ব্যাক্তি বর্গরা। তার পর থেকে ভালোই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌর চন্দ্র মাহাতো। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌর চন্দ্র মাহাতোর মামলা থাকার পরেও টাকার বিনিময়ে আব্দুর রউফ পরবর্তীতে সরকারি এক আদেশের প্রেক্ষিতে আবার প্রধান শিক্ষক হিসেবে দাবি করে বসেন সহকারী শিক্ষক রউফ । এরপর ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় উত্তেজনা । এমনকি হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী । এর পর শুরু হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি । যার খেসারত দিচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম ও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শোহাইবসহ সেখানে উপস্থিত অনেক শিক্ষার্থী জানান, আমরা আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব দেখতে চাইনা। আমরা চাই সুন্দর পরিবেশে পড়াশোনা করতে । তাই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা প্রশাসনসহ স্থানীয়দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা । একইভাবে দ্বন্দ্ব চান না ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী কিছু সহকারী শিক্ষক এবং এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা । সেখানে উপস্থিত রফিকুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন, আনোয়ার হোসেন রেজাউল করিম, খাদেমুল ইসলাম সাইদুর রহমান, মেহেদী হোসেন সহ অনেকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষকরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে । বঞ্চিত হবে শিক্ষা গ্রহণ থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ।এমনকি একাধিক অভিভাবক শিক্ষকদের এমন দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা করতে চাইলেন। এমন শিক্ষক চান না তারা । প্রয়োজনে তাদেরকে অন্যত্র বদলি করা হোক । তবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের অধিকাংশের চাওয়া জ্যেষ্ঠ শিক্ষক গৌর চন্দ্র মাহাতো প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করুক । আওয়ামী সরকারের দুশাসনের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর কালপিট আব্দুর রউফ,সেখানে এসে নিজেকে বৈধ প্রধান শিক্ষক দাবি করে বলেন, আমাকে গত ২৭ জুলাই বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পট পরিবর্তনের পর আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে । আমি ভয়ে পদত্যাগ করেছি এবং গৌরকে দায়িত্ব বুঝে দিয়েছিলাম । সকল কাগজে কি লেখা ছিল আমি পড়েও দেখিনি বলে দায়সারা জবাব দিলেন আব্দুর রউফ । এখন পরিপত্র অনুযায়ী আমি প্রধান শিক্ষক । তাই স্কুলে এসে দায়িত্ব নিতে চাইলে ঝামেলার সৃষ্টি হয় । এছাড়া আওয়ামী লীগের সময়ে আমার নিয়োগ হওয়ায় তারা আমাকে আওয়ামীলীগ মনে করছে। বৈধ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবি করে শিক্ষক গৌর চন্দ্র মাহাতো বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেনের পদ শূন্য হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তৎকালীন সভাপতি শ্যামল দত্ত আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে আমাকে সরিয়ে জুনিয়র শিক্ষক প্রবীর কুমার দাসকে দায়িত্ব দেন । এরপর তাদের যোগসাজে আরও জুনিয়র শিক্ষক আব্দুর রউফকে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন । যেটা আইনবহির্ভূত । তাই এলাকাবাসী মেনে নিতে পারেননি । পরবর্তীতে সকলের সম্মতিক্রমে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যয়ন প্রদান করেন। জানতে চাইলে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সাবেক সভাপতি শ্যামল দত্ত মুঠোফোনে বলেন, বিধি মোতাবেক রউফকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কিভাবে রউফকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষক গৌরসহ কেউ আবেদন করেছিলেন না । যারা আবেদন করেছিলেন তারাই অংশগ্রহণ করেন এবং রউফকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জানতে চাইলে পত্নীতলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান বলেন, বিধি মোতাবেক রউফকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । কিন্তু শিক্ষক গৌর সেটা মেনে নেয়নি। তাই মামলা করেছে । এদিকে পট পরিবর্তনের পর ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকাবাসীসহ সকলের সম্মতিক্রমে গৌরকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে । এখন উভয় পক্ষই জটিলতা সৃষ্টি করছে । ইউএনও স্যার বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি । আশা করছি খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আলীমুজ্জামান মিলন বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে একটা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যেকোনো উপায়ে স্কুল খোলা থাকবে এবং পাঠদান চলবে।উল্লেখ, শিক্ষক রউফের সাথে ইউএনও অফিসে আসা একাধিক শিক্ষক সঠিকভাবে বলতে পারেননি তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা । চলতি পরীক্ষার্থী কতোজন সেটাও বলতে পারেননি তারা । এমনকি রউফও বলতে পারেননি । বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌর চন্দ্র মাহাতোকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৬০ জন । এবং পরীক্ষার্থী ৪২ জন বলে জানা তিনি ।